চিরতার আশ্চর্য উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কার্যকারী তথ্য জেনে নিন

চিরতার আশ্চর্য উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য থাকছে আজকের ব্লগ পোস্টে। শরীরকে সুস্থ রাখতে বিভিন্ন উপকারী উপাদান রয়েছে চিরতায়। চিরতার সকল উপকারী দিক জানতে পারবেন আজকের পোস্ট পড়ে, পাশাপাশি চিরতার অপকারিতাও জেনে নিন। 

চিরতার-আশ্চর্য-উপকারিতা
এছাড়াও আজকের ব্লগ পোস্ট হতে জানতে পারবেন চিরতা কিডনির ক্ষতি করে কিনা তা সম্পর্কে এবং চিরতা খাওয়ার নিয়ম সমূহ। আশা করছি এই বিশেষ প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জেনে উপকৃত হবেন। আর দেরি না করে, চলুন শুরু করা যাক।

পেইজ সূচিপত্রঃ চিরতার আশ্চর্য উপকারিতা 

চিরতার আশ্চর্য উপকারিতা 

চিরতার আশ্চর্য উপকারিতা সম্পর্কে বলতে গেলে লিখে শেষ করা যাবে না। এটি একটি প্রাকৃতিক এবং ভেষজ উদ্ভিদ। এটির সাধ ভীষণ তিতা। চিরতা তিতা স্বাদের জন্য বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে। বলা যায় তিতা স্বাদের জন্য এটি বিখ্যাত। নিয়মিত চিরতার রস খেলে এটি ভীষণ উপকারী ভূমিকা পালন করে শরীরের জন্য। বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম চিরতা। চলুন জেনে নেওয়া যাক চিরতার আশ্চর্য উপকারিতা সমূহঃ

  • চিরতায় রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • এছাড়াও চিরতায় রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল। এটি সাধারণত সর্দি কাশি ও বিভিন্ন রোগ জীবাণু দ্বারা সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। 
  • চিরতা রক্তে অতিরিক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। 
  • চিরতার রস যেহেতু শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে, তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ব্যাপক কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
  • লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে চিরতার রস। 
  • শরীরের ভেতরের বিষাক্ত পদার্থ শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখে চিরতার রস। 
  • বদহজম দূর করতে সাহায্য করে চিরতা। বদহজম দূর করে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • পেট ব্যথা সহ পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর করে।
  • শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে চিরতা। 
  • চিরতায় থাকা উপকারী উপাদান গুলো ম্যালেরিয়া ও টাইফয়েড এর মত জ্বর কমাতে সাহায্য করে। 
  • চিরতার শরীরের রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। 
  • শরীরের বিভিন্ন জায়গার প্রদাহ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে চিরতা।
  • ত্বকে ব্রণর এর সমস্যা দূর করতে চিরতা ব্যাপক উপকারী।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে চিরতা।
  • চিরতার রস নিয়মিত খেলে চুলের গোড়া মজবুত হয়। 
  • চুলের খুশকি দূর করতে সাহায্য করে চিরতা। 
  • রক্তে আয়রন শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে চিরতা।
  • অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে চিরতা।
  • চিরতার তেতো রস এর উপাদান সমূহ পিত্তরসের নিঃসরণ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
  • চিরতার হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। 
  • চিরতার রস শরীরকে ডিটক্সিফাই করে।
  • চিরতার রস অরুচি দূর করে এবং খাবারের প্রতি আগ্রহ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। 
  • বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে চিরতার রস। 
  • ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়া দ্রুত করে দেয় চিরতার রস।
  • চিরতার রসে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল যা যেকোনো ধরনের ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। 
  • এছাড়াও চিরতার রসে রয়েছে অ্যান্টি ফাঙ্গাল যে কোনো ধরনের চুলকানি বা র‍্যস থেকে মুক্তি দেয়।

খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা 

খালি পেটে চিরতা খাওয়া ভীষণ উপকারী। প্রতিদিন খালি পেটে চিরতা খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারেন। সুস্থ স্বাস্থ্যের জন্য এটি ভীষণ উপকারী ভূমিকা পালন করে। বহুকাল আগে থেকেই চিরতা খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। চলুন জেনে নেওয়া যাক খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কেঃ

  • পি এইচঃ সকালে খালি পেটে চিরতার রস খেলে শরীরে পি এইচ নিয়ন্ত্রণ হয়। বিষাক্ত অ্যাসিড এবং বিষাক্ত পদার্থ গুলো শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। অতিরিক্ত বিষাক্ত পদার্থ গুলো শরীরের জমা থাকলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এগুলো বের হয়ে যেতে সাহায্য করে চিরতা। 
  • হজমঃ পেট পরিষ্কার রাখতে এবং পাকস্থলীকে সুস্থ রাখতে চিরতা ভীষণ উপকারী। চিরতার রস নিয়মিত খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং পেটের যে কোনো গোলমাল দূর করে। বদহজম বা এসিডিটির সমস্যা থাকলে প্রতিদিন খালি পেটে চিরতার রস খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারেন।
  • লিভারঃ লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে চিরতা। এছাড়াও চিরতার তিতা উপাদানসমূহ পিত্তরস নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। লিভারের সমস্যা দেখা দিলে মুখে দুর্গন্ধ হয়। তাই লিভারকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত চিরতা খেতে পারেন।
  • ডায়াবেটিসঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে চিরতা ভীষণ উপকারী। চিরতা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস এর রোগী নিয়মিত সকালে খালি পেটে চিরতা খেতে পারেন।
  • অরুচিঃ অরুচির সমস্যা থাকলে খালি পেটে চিরতার রস খেতে পারেন। ক্ষুধামন্দা দূর করে খাবারের প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে সাহায্য করে। অরুচি ও বমি ভাব দূর করতে ভীষণ উপকারী ভূমিকা পালন করে চিরতা।
  • রক্ত সঞ্চালনঃ রক্ত পরিষ্কার করে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং ত্বক স্বাস্থ্যবান হয়ে ওঠে।
  • ফ্রি রেডিক্যালঃ ফ্রি রেডিক্যাল দূর করতে সাহায্য করে চিরতা। কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে। বার্ধক্যের প্রক্রিয়া, ধীর করতে ভীষণ ভূমিকা পালন করে চিরতার রস। তাই খালি পেটে চিরতার রস খাওয়া খুবই উপকারী। 
  • মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাঃ চিরতার রস খালি পেটে খেলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়। যেকোনো ধরনের মানসিক চাপ উদ্বেগ দূর করতে সাহায্য করে। 
  • হরমোনঃ হরমোন এর কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীর কর্মক্ষম থাকে সারাদিন। শরীরকে সতেজ রাখে এবং ক্লান্তি দূর করে। 
  • ঘুমঃ ঘুমের সমস্যা থাকলে তা দূর করতে সাহায্য করে চিরতার রস। ফলে মানসিকভাবে সুস্থ থাকা যায়। তাই নিয়মিত খালি পেটে চিরতার রস খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারে। স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে এটি ব্যাপক কার্যকরী।

চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করতে পারে 

চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করতে পারে এমন প্রশ্ন আপনাদের অনেকেরই? চিরতা একটি প্রাকৃতিক ভেষজ গুণ সম্পন্ন উদ্ভিদ। এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তবে এর ভুল ব্যবহার বা সঠিক ব্যবহার জানা না থাকলে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। একটি ভালো জিনিসের ভুল ব্যবহারও খারাপ ফলাফল দিতে পারে। তাই বলা যায় চিরতা অর্থাৎ প্রাকৃতিক উপাদানটির ক্ষতি নির্ভর করে এটির ব্যবহারের উপরে। 

আরো পড়ুনঃ মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা

তাই সঠিক ব্যবহার জানতে হবে এবং সঠিক নিয়মে ব্যবহার করতে হবে। চিরতা কতটা উপকারী তা উপরে আমরা আলোচনা করেছি। চিরতার ভুল ব্যবহার বিপরীতমুখী ফলাফল দিতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক। চিরতা মানব শরীর হতে টক্সিন বা বিষাক্ত উপাদান গুলো দূর করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ এটিতে থাকা উপাদান প্রস্রাব বৃদ্ধি করে, যার ফলে কিডনির ওপর প্রভাব সৃষ্টি করে।

তাই চিরতার দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবহারের ফলে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। তাহলে বুঝতে পারছেন দীর্ঘদিন চিরতার রস গ্রহণ করলে কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চিরতায় থাকা স্যামারিন নামক উপাদান কিডনি ও লিভার পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তবে চিরতা অতিরিক্ত ব্যবহার করলে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। অর্থাৎ চিরতায় থাকা স্যামারিন উপাদানটি শরীরের জন্য বিষাক্ত হয়ে যেতে পারে।

এছাড়াও চিরতার অতিরিক্ত ব্যবহার শরীরের ইলেকট্রোলাইট নিয়ন্ত্রণ নষ্ট করে দিতে পারে। এতে কিডনির ফিল্টারিং ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে প্রস্রাবে সমস্যা দেখা দেয়। তাই চিরতার রস অতিরিক্ত ব্যবহার করা যাবে না। আর যাদের আগে থেকেই কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে চিরতার পাতা ব্যবহার করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার চেষ্টা করবেন। 

চিরতার পুষ্টি উপাদান 

চিরতা কতটা পুষ্টি উপাদানে ভরপুর তা বিস্তারিত জানতে চলেছি এই পোস্টে। ইতিমধ্যে চিরতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি। চিরতা বিভিন্ন ঔষধি গুণাগুণ এ ভরপুর। সঠিক ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। শরীরকে ভেতর থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে সুস্থ করতে ভীষণ উপকারী ভূমিকা পালন করে চিরতা। ক্ষতিকর দিক এড়াতে চিরতার রস সেবন করার আগে অবশ্যই খাওয়ার নিয়ম জেনে নিবেন। চলুন দেখে নেওয়া যাক চিরতার পুষ্টি উপাদান। 

চিরতার-পুষ্টি-উপাদান
১০০ গ্রাম চিরতায় রয়েছেঃ

  1. প্রোটিন                       -  ৪.১ গ্রাম
  2. কার্বোহাইড্রেট             -  ২৮.৫ গ্রাম
  3. ডায়েটারি ফাইবার       -   ৫.৮ গ্রাম
  4. ফ্যাট                          -  ০.৩ গ্রাম
  5. ভিটামিন-সি               - ০.৫ গ্রাম
  6. ক্যালসিয়াম               -  ১৯০ মিলিগ্রাম
  7. পটাশিয়াম                 -  ৭৯০ মিলিগ্রাম
  8. আয়রন                     -  ৩.২ মিলিগ্রাম
  9. ম্যাগনেসিয়াম             -  ৮৫ মিলিগ্রাম
  10. ফসফরাস।                -  ৫০ মিলিগ্রাম

চিরতা খাওয়ার নিয়ম 

চিরতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। চিরতা সঠিক নিয়মে খেতে হয়। অতিরিক্ত সেবন করা উচিত নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন চিরতা খাওয়ার আগে। চিরতা ভীষণ শক্তিশালী প্রাকৃতিক ভেষজ উদ্ভিদ। এটি সঠিক নিয়মে খেলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে। তাই শরীরের সমস্যা দূর করতে পুষ্টি উপাদানে ভরপুর চিরতা নিয়ম মেনে খাওয়ার চেষ্টা করুন। 

অতিরিক্ত খাওয়া পরিহার করা উচিত। কখনো এটা মনে করবেন না বেশি বেশি খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। ভালো জিনিসের অতিরিক্ত ব্যবহারে খারাপ ফলাফল পেতে পারেন। তাই নিয়ম অনুসরণ করে খেতে হবে বেশি খাওয়া যাবেনা। সঠিক পরিবারে না খেলে শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। প্রতিদিন ২ থেকে ৪ গ্রাম চিরতার রস খাওয়া উচিত। এর বেশি খাওয়া উচিত হবে না।

চিরতার পাতা শুকনা, ভেজা অথবা রস করেও খাওয়া যায়। মনে রাখবেন সবার ক্ষেত্রে খাওয়ার পরিমাণ বা খাওয়ার নিয়ম এক না। খাওয়ার পরিমাণ বা নিয়ম নির্ভর করবে শরীরের অবস্থা বা আপনার উদ্দেশ্যের ওপর। চিরতা পাতার সর্বোচ্চ ফলাফল পাওয়া যায় খালি পেটে খেলে। খালি পেটে খেলে চিরতার উপাদান শরীরে ভালোভাবে শোষিত হয়। সকালে খালি পেটে চিরতা খেতে চাইলে রাতে এক চামচ চিরতা ভিজিয়ে রাখুন। 

তারপর সকালে সেই পানি পান করুন। এটি শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। এটি শরীরের বিষাক্ত উপাদান দূর করে দিতে সাহায্য করে এবং পাচকক্রিয়া সক্রিয় রাখে। তবে দীর্ঘদিন চিরতার রস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। খাওয়ার মাঝে কিছুদিন গ্যাপ রাখুন অর্থাৎ কিছুদিন চিরতার পাতা খান মাঝে কিছুদিন খাওয়া বন্ধ রাখুন। যেমন: একটানা ১ মাস চিরতার রস খাবার পর ১ সপ্তাহ খাওয়া বন্ধ রাখুন।

চিরতা প্রাকৃতিক উদ্ভিদ এটি খেতে অত্যন্ত তিতা হয়ে থাকে। খালি চিরতা খেতে না পারলে মধুর সাথে অথবা লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে খেতে পারে। এই নিয়ম মেনে চিরতা খেলে কিডনির সমস্যা রোধ করা সম্ভব। তবে আগে থেকে যারা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন তারা চিরতার রস খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। কোন সমস্যায় অভিজ্ঞদের পরামর্শ দেওয়ার কোন বিকল্প নেই।

চিরতা ভেজানো পানির উপকারিতা

চিরতা ভেজানো পানির উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। চিরতার স্বাদ তেতো হলেও পুষ্টিতে কোনো কমতি নেই। আপনি যেভাবেই খান উপকার পাবেন। খালি পেটে খেলে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। এছাড়াও চিরতা ভেজানো পানিও খুব কার্যকরী। আপনি আপনার পছন্দমত খেতে পারেন। পেটের ভেতর একবার প্রবেশ করাতে পারলেই উপকার আছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক চিরতা ভেজানো পানির উপকারিতাঃ

আরো পড়ুনঃ অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

  • চিরতা ভেজানো পানি খেলে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম এর শূন্যতা পূরণ করে। হাড় ও দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে। হাড়ের ঘনত্ব বাড়িয়ে দেয়। 
  • চিরতায় রয়েছে আয়রন যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। রক্তশূন্যতা পূরণ করতে সাহায্য করে। 
  • চিরতা ভেজানো পানি খেলে মাইগ্রেনের সমস্যা দূর হয়। এছাড়াও সাইনাস ব্লকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।
  • টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে চিরতা ভেজানো পানি। 
  • চিরতা ভেজানো পানি পাকস্থলীতে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। 
  • ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে চিরতা ভেজানো পানি। ধূমপান কারীদের এটি ভীষণ কাজে আসবে। ফুসফুস কে পরিষ্কার রাখতে চিরতা ভেজানো পানি খাওয়ার কোন বিকল্প নেই।
  • শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে চিরতা ভেজানো পানি। শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণে বাধা দেয় চিরতার পানি।
  • চিরতা ভেজানো পানি খেলে শরীরের ইউরিক এসিড কমে যায় ফলে বাত ব্যথা বা আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে চিরতা ভেজানো পানি। পেটের গোলমাল দূর করে। 
  • চিরতা ভেজানো পানি নিয়মিত খেলে অন্তরের ক্ষতিকর কৃমি ধ্বংস হয়ে যায়। 
  • শরীরের বিভিন্ন অংশে দীর্ঘ মেয়াদী প্রদাহ দূর করে চিরতা ভেজানো পানি। ইনফ্লামেশন কমাতে সাহায্য করে। 
  • শরীরের বিভিন্ন অংশে যেমন পেশিতে বা জয়েন্টের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে চিরতা। 
  • ঘুমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে চিরতা। মানসিক চাপ কমিয়ে শরীর ও মন সতেজ রাখতে সাহায্য করে চিরতা ভেজানো পানি। খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারেন। 

চিরতা কতদিন খাওয়া নিরাপদ 

চিরতা কতদিন খাওয়া নিরাপদ চলুন এসব সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে আসি। দীর্ঘমেয়াদী চিরতার রস খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে চিরতার রস খেলে শরীরে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে খাওয়া উচিত। এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলুন বিস্তারিত জানা যাক চিরতার পাতা কতদিন খাওয়া নিরাপদ তা সম্পর্কে। 

  • চিরতা কতদিন খাওয়া নিরাপদ এটি নির্ভর করবে আপনার শরীরের অবস্থা এবং আপনার সমস্যার উপর। আপনি যদি শারীরিক দুর্বলতা ও বদ হজম এর সমস্যা দূর করতে চান তাহলে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ সেবন করতে পারেন চিরতার রস।
  • ডায়াবেটিস এবং কিডনির সমস্যা হলে ১ থেকে ২ মাস টানা খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারেন। তবে অবশ্যই একমাস পর ১ সপ্তাহ খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। ডাক্তারের পরামর্শ দিলে সবচাইতে বেশি ভালো হবে।
  • আর যাদের আগে থেকেই কিডনির সমস্যা রয়েছে তারা খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ দিবেন। ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার কোন বিকল্প নেই। সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে ডাক্তারের পরামর্শ দেওয়া আবশ্যক।
  • অতিরিক্ত বা দীর্ঘদিন চিরতার রস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন। এটি কিডনির সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সপ্তাহে ২/১ দিন খেতে পারেন শারীরিক ছোটখাটো সমস্যার জন্য। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।

গর্ভাবস্থায় চিরতা খেলে কি হয় 

গর্ভাবস্থায় চিরতা খেলে কি হয় সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি। একটি স্বাভাবিক মানুষের শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী চিরতা। চিরতার উপাদান সমূহ শরীরের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। তবে গর্ভাবস্থায় এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত। গর্ভাবস্থায় চিরতা খেলে গর্ভবতী মা ও শিশুর শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। চিরতার রস খেলে শিশুর শরীরে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাক।  

গর্ভাবস্থায়-চিরতা-খেলে-কি-হয়
গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোনের পরিবর্তন হয়। চিরতা নিয়মিত খেলে হজমের সমস্যা দূর হয় এজন্য গর্ভাবস্থায় অনেকেই এটি খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে এটি হজমের সমস্যা দূর করলেও হরমোনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। গর্ভাবস্থায় হজমের সমস্যা একটি সাধারণ সমস্যা এটি সকলেরই হয়ে থাকে। কিন্তু এটি নিরাময় করতে চিরতার রস খেলে শরীরে অতিরিক্ত উত্তেজনা বা অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। 

গর্ভাবস্থায় চিরতা হজমের সমস্যা দূর করতে সক্ষম নয় বরং হজমের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে, পেটব্যথা হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় চিরতা থেকে দূরে থাকাই ভালো। অতিরিক্ত চিরতা ব্যবহারের ফলে গর্ভপাত পর্যন্ত হতে পারে। এটি এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে অল্প পরিমাণে খেতে পারেন। চিরতার রস খেতেই হবে এমনটা নয় এর ব্যতিক্রম হিসেবে আদা চা, পুদিনা পাতা ও লেবু পানি ব্যবহার করতে পারেন। 

এটি আপনাকে ঝুঁকিমুক্ত রাখবে এবং আপনার সমস্যার সমাধান দিবে। আপনি যদি গর্ব অবস্থায় সামান্য পরিমাণে চিরতা খেতে চান তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া সবচাইতে ভালো হবে। এছাড়াও খাওয়ার পরে সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। বাচ্চার সুস্থতা নির্ভর করে আপনার খাওয়া-দাওয়া এবং চলাফেরার ওপর। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন।

চিরতার অপকারিতা 

চিরতার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। এটাতো কতটা উপকারী মানব শরীরের জন্য তা ইতিমধ্যে আলোচনা করা হয়েছে। তবে এর ভুল ব্যবহারে রয়েছে কিছু ক্ষতির সম্ভাবনা। তাই অবশ্যই উপরে আলোচিত নিয়ম অনুসারে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। অতিরিক্ত খাওয়া শরীরের জন্য মোটেই ভালো হবে না। নিয়ম মেনে খেলে ক্ষতি রোধ করা সম্ভব। চলুন দেখে নেওয়া যাক চিরতা খেলে আমাদের শরীরে কি অপকার হতে পারে, নিম্নে উপস্থাপন করা হলোঃ

আরো পড়ুনঃ থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

  • গর্ভাবস্থায় চিরতা থেকে দূরে থাকা উচিত কারণ এটি গর্ভপাতের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এটি গর্ভের পেশী সংকোচন ঘটায়।
  • গর্ভাবস্থায় চিরতার রস খেলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আর যাদের আগে থেকেই হরমোনের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এটা থেকে দূরে থাকা বাধ্যতামূলক।
  • গর্ভাবস্থায় চিরতা খেলে শিশুর শারীরিক বিকাশে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় চিরতা খাওয়া থেকে দূরে থাকাই ভালো।
  • অতিরিক্ত চিরতা খেলে গ্যাস্ট্রিক, পেটে অস্বস্তি এবং পেটব্যথা দেখা দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত চিরতার ব্যবহার রক্তচাপের ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে সক্ষম। 
  • অতিরিক্ত চিরতা ব্যবহারে লিভারের ক্ষতি হতে পারে। 
  • দীর্ঘদিন চিরতার ব্যবহারে কিডনি অকেজো হয়ে যেতে পারে। 
  • চিরতা পরিমান মত খাওয়া উচিত নয়তো শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। চিরতা শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে। তবে এটি বেশি পরিমাণে খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। 
  • চিরতা বেশি পরিমাণে খেলে ডায়রিয়া হতে পারে। 
  • চিরতা বেশি পরিমাণে খেলে বমি হতে পারে। 
  • চিরতার অতিরিক্ত ব্যবহারে শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 
  • চিরতা অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করলে এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই চিরতায় যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তারা চিরতা থেকে দূরে থাকুন। এটি সংবেদী ত্বকের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। 
  • যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের ব্রণের সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। 
  • অতিরিক্ত চিরতা খেলে ডিহাইড্রেশন এর সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এটি প্রস্রাব বাড়িয়ে দেয়।
  • অতিরিক্ত চিরতা খেলে অস্থিরতা কাজ করতে পারে অর্থাৎ হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত চিরতা খেলে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে। মাথা ঘোরা, বমি ভাব, মাথা ব্যথা এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • চিরতা বেশি পরিমাণে খেলে পেশি সংকোচন হয়ে যেতে পারে। 
  • শরীরে সোডিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে চিরতার অতিরিক্ত ব্যবহারে।
  • অতিরিক্ত চিরতা সেবন করলে শর্করার ভারসাম্য বা স্তর পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে যা ডায়বেটিস রোগীর জন্য ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ। 

মন্তব্যঃ চিরতার আশ্চর্য উপকারিতা 

চিরতার আশ্চর্য উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের সাথে বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা করেছি। আশা করি চিরতার উপকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এছাড়াও আলোচনা করেছি চিরতার রস কিভাবে খাওয়া  হলে তা স্বাস্থ্যের জন্য সবচাইতে ভালো হবে। উপরের পোস্ট পড়ে আপনারা চিরতার রস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন। 

চিরতার রস থেকে উপকারিতা পেতে চাইলে অবশ্যই নিয়ম মেনে খেতে হবে। কারণ ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি অতিরিক্ত ব্যবহারে কিভাবে শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে চিরতার রস। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে এবং নিজেকে সুস্থ রাখতে নিয়ম মেনে খাওয়ার চেষ্টা করুন চিরতার রস। আশা করি আজকের পোস্ট হতে উপকৃত হবেন। সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডেইলি ডাইরির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url