শরীরে শীত বেশি লাগার কারণ কি - জেনে নিন

শীত বেশি লাগার কারণ কি? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চান? সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না? তাহলে আজকের পোষ্ট আপনার জন্য। আজকের পোস্ট পড়ে আপনি উপকৃত হবেন। শীত লাগার কারণ এবং ঘনঘন শরীরে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার কারণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো আজকের ব্লক পোস্টে। 

শীত-বেশি-লাগার-কারণ
এছাড়াও শীতকালে আপনাদের যেসব সমস্যা হয় সেই সব সমস্যাগুলোর সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবো। আজকের পোস্ট পড়ে জানতে পারবেন শীতকালে গোসল করার উপায় এবং জানতে পারবেন শীতকালে গোসল করার উপকারিতা সম্পর্কে। আশা করছি উপকৃত হবেন। 

পেইজ সূচিপত্রঃ শীত বেশি লাগার কারণ 

শীত বেশী লাগার কারণ 

শীত বেশি লাগার কারণ কি? চলুন এ বিষয় নিয়ে আজকের পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করিঃ শীতকালে শীত লাগবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আপনি যদি অনুভব করেন অন্যদের তুলনায় আপনার শরীরে বেশি শীত লাগছে তাহলে বুঝতে হবে আপনি পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। এছাড়াও আপনার শারীরিক কিছু সমস্যার কারণে শীত বেশি লাগতে পারে। চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। যেসব কারণের শরীরে শীত বেশি লাগে তা হলোঃ

কম ওজনঃ ওজন কম থাকলে শরীরের শীত বেশি লাগতে পারে। ওজন কমে গেলে শরীরের বিএমআই  (BMI) কমে যায় ফলে শীত বেশি অনুভূত হতে পারে। বি এম আই হলো বডি মাস ইনডেক্স, যা ১৮.৫ কে আদর্শ হিসেবে ধরা হয়। এর নিচে থাকলে বুঝতে হবে তার ওজন কম। ওজন কম হওয়ার কারণে বেশি শীত লাগতে পারে। তাই শরীরের সঠিক ওজন ধরে রাখার চেষ্টা করুন।

চর্বিঃ শরীরে চর্বির পরিমাণ কমে গেলে শীত লাগতে পারে। তাই পরিমিত খাবার খেতে হবে এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হবে। শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং চর্বির পরিমাণ সঠিক রাখতে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিকর খাবার বলতে মনে করবেন না শুধু প্রোটিন এবং চর্বি জাতীয় খাবার খেলেই হবে। পর্যাপ্ত ভিটামিন রয়েছে এমন খাবার নির্বাচন করুন। খাবার গরম হলে আপনার জন্য আরো ভালো। 

ঠান্ডা খাবার থেকে বিরত থাকুনঃ অতিরিক্ত শরীরে শীত লাগলে ঠান্ডা খাবার থেকে বিরত থাকুন। ঠান্ডা তরল বা ঠান্ডা যে যেকোনো খাবার আপনার শরীরের শীত বাড়িয়ে দিবে। চাইলে আপন চা, কফি, গ্রিন টি, অথবা সুপ রাখতে পারেন। এগুলো খেলে শরীর গরম থাকবে। খাবার খাওয়ার সময় অবশ্যই খাবার গরম করে নেবেন। অলসতা করে ঠান্ডা খাবার খাবেন না এতে শরীরে তাপমাত্রা কমে যেতে পারে।

দুর্বলতাঃ শরীরের দুর্বলতা বেড়ে গেলে শীতকালে বেশি ঠান্ডা অনুভূতি হয়। আপনার শরীর দুর্বল মানে আপনার শরীরে পুষ্টির ঘাটতি রয়েছে। আর শরীরে যখন পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয় তখন ঠান্ডা বেশি অনুভূত হয়। তাই পুষ্টিকর খাবার খেয়ে শরীরের চর্বির অভাব পূরণ করুন এবং শরীরের দুর্বলতা দূর করার চেষ্টা করুন। দেখবেন ঠান্ডা লাগার প্রবণতা কিছুটা হলেও কমে গেছে। 

থায়রয়েড হরমোনঃ থায়রয়েড হরমোন নিঃসরণ কমে গেলে শরীরে শীত বেশি লাগতে পারে। থায়রয়েড হরমোন কমে গেলে ত্বকের শুষ্কতা বেড়ে যায়। তাই ভিটামিন-বি ১২ উপাদান রয়েছে এমন খাবার গ্রহণ করতে হবে। শরীরে পুষ্টির শূন্যতা পূরণ করে স্ট্রং থাকতে হবে। শরীর সঠিক পরিমানে খাবার পেলে তবেই শরীরের প্রয়োজনীয় হরমোন পরিমাণ মতো নিঃসরণ হবে।

রক্তশূন্যতাঃ রক্তশূন্যতা দেখা দিলে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। অর্থাৎ বেশি ঠান্ডা লাগে শরীরে। হাত পা সহজে গরম হতে চায় না বরফের মত ঠান্ডা হয়ে থাকে। তাই আয়রন যুক্ত খাবার খেতে হবে। লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ রক্তের শূন্যতা পূরণ হয় এমন পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত খান। রক্তের মাধ্যমে পুরো শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ হয়। সঠিকভাবে অক্সিজেন সরবরাহ না হলেও শারীরিক সমস্যা দেখা দিবে।

স্বাস্থ্যকর খাবারঃ স্বাস্থ্যকর খাবারের ঘাটতি থাকলে শরীরে অতিরিক্ত ঠান্ডা অনুভূতি হতে পারে। সুন্দর জীবন যাপন করতে স্বাস্থ্যকর খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই শরীরে ভিটামিনের শূন্যতা পূরণ করতে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করলে রক্তশূন্যতা পূরণ হবে এবং শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা সঠিক থাকবে। শরীর ভেতর থেকে স্বাস্থ্যবান হলে তবেই বাহিরের অতিরিক্ত শীত রোধ করা সম্ভব।

কিডনির রোগঃ দীর্ঘদিন যাবত কিডনির রোগ থাকলে সেই সব ব্যক্তিদের ঠান্ডা বেশি লাগে। কিডনির রোগ দেখা দিলে শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। তাই আপনি যদি অনুভব করেন আপনার শরীরে ঠান্ডা বেশি লাগছে তাহলে কিডনির সুস্থতা চেক করতে পারেন। কিডনির সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডাক্তারের পরামর্শে চললে ভালো ফলাফল পাবেন। 

অ্যালকোহলঃ অ্যালকোহলে আসক্ত হলেও শরীরে শীত বেশি লাগতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্ক। কিন্তু অ্যালকোহল এর প্রভাবে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যার ফলে নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই অ্যালকোহল পরিত্যাগ করুন। অ্যালকোহলের কারণে শরীরের তাপমাত্রা কমে গিয়ে অতিরিক্ত ঠান্ডা অনুভূতি হতে পারে। 

অতিরিক্ত ঔষধঃ অতিরিক্ত ঔষধ খেলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে শরীরের তাপমাত্রা কমে যেতে পারে। তাই প্রয়োজনের বাইরে ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে যে যেসব ব্যক্তি উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদপিন্ডের রোগে আক্রান্ত তাদের এ সমস্যা বেশি দেখা দেয়। এই রোগের ওষুধগুলো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। হাত পা সহজে গরম হতে চায় না। শীতকালে এই সমস্যা অনেক বেড়ে যায়।

ডায়াবেটিসঃ ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ু রোগ দেখা দিতে পারে যার কারণে শরীরে অতিরিক্ত শীত লাগে। হাত পা তেমন ঠান্ডা না থাকলেও শরীরে ঠান্ডা অনুভূত হয়। এটির জন্য দায়ী স্নায়ু। আবার ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দিলেও এমন সমস্যা হতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা একটু সাবধানে চলাফেরা করবেন। গরম খাবার খাবেন এবং গরম পোশাক পরিধান করবেন।

পর্যাপ্ত ঘুমঃ শরীরের বিভিন্ন কার্যকলাপ অব্যাহত রাখার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ঘুমের ঘাটতি রাখবেন না। প্রতিদিন সঠিক সময়ে ঘুমাতে যাবেন এবং সঠিক সময় ঘুম থেকে উঠে ঘুমের শূন্যতা পূরণ করতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুম হলে তবেই হাইপোথ্যালামাস সঠিকভাবে কার্যরত থাকবে। এটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

সঠিক সময় ঘুমানোঃ প্রতিদিন সঠিক সময় ঘুমাতে যেতে হবে এবং একই সময় ঘুম থেকে উঠতে হবে। সুন্দর স্বাস্থ্যের পূর্ব শর্ত ঘুম। ঘুম ঠিকমতো না হলে কোন কাজে মনোযোগ দেওয়া যায় না। হাত-পা গরম হতে চায় না। ঘুমানোর অন্তত ৩০ মিনিট আগে যে কোন যেকোনো ডিভাইস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। চাইলে বই পড়তে পারেন। 

হট ব্যাগঃ ঘুমানোর সময় হাত-পা অতিরিক্ত ঠান্ডা হয়ে থাকলে হট ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। এটি পায়ের কাছে রাখলে দ্রুত পা গরম হয়ে যাবে এবং ঘুমাতে সুবিধা হবে। তবে অসুস্থ ব্যক্তিরা এ কাজ থেকে দূরে থাকবেন। সচেতন যারা আছেন তারা হট ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। এটি শীতের সময় খুবই উপকারী একটি প্রোডাক্ট বলে আমি মনে করি। 

টেনশন মুক্তঃ অতিরিক্ত টেনশন না করে মাথাকে টেনশন মুক্ত রাখার চেষ্টা করবেন। অতিরিক্ত টেনশন করলে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন শীতের সময় মানুষ বেশি গম্ভীর হয়ে যায়। তাই এ বিষয়ে একটু সতর্ক থাকবেন। মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখবেন। টেনশন ফ্রি থাকলে আপনি শারীরিক ভাবেও সুস্থ থাকতে পারবেন। 

কান ঢেকে রাখুনঃ কান ঢেকে না রাখলে শরীর সহজে গরম হতে চায় না। বিশেষ করে কান আর পা বেশি সক্রিয় মানবদেহে। কানার পা দ্রুত শীত অনুভব করতে পারে। তাই গরম কাপড় ব্যবহার করুন। এতে আপনার শরীর ঠান্ডা লাগা থেকে রক্ষা পাবে। ঘুমানোর সময় কানের ওপর চাদর অথবা কম্বল দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। এতে শরীরে কিছুটা হলেও ঠান্ডা কম লাগবে। 

সাবধানতাঃ গরম পানি, গরম খাবার এবং গরম পোশাক শীতকালে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর যাদের অতিরিক্ত শীত লাগে তাদের জন্য এগুলো বাধ্যতামূলক। ঠান্ডা মেঝে তে খালি পায়ে হাটাহাটি করা থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে মজা ব্যবহার করুন। মোটা কোমল  সুতার মোজা গুলো অনেক গরম হয় চাইলে ওগুলো ব্যবহার করতে পারেন। পাশাপাশি মেঝেতে ঘুমানো থেকে বিরত থাকুন।

সচেতন থাকুনঃ শীতকালে শরীর ও ত্বকের যত্ন একটু বেশি নিতে হয়। তাই গম্ভীর হয়ে সারাদিন শুয়ে বসে না থেকে সচেতন থাকার চেষ্টা করুন। শরীর এবং মন কে একটিভ রাখুন। নিজেকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখুন। গরম পোশাক পরিধান করুন এবং খাবারের প্রতি সচেতন হন। ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করুন। প্রয়োজনে হাতে পায়ে মোজা পড়ে থাকেন। তবে খেয়াল রাখবেন পায়ে মোজা পড়ে ঘুমিয়ে যাবেন না এতে ব্রেনের ক্ষতি হয়।

ব্যায়াম করুনঃ পর্যাপ্ত ব্যায়াম বা হাটাহাটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি পরিমাণ মতো দিনে কায়িক পরিশ্রম না করেন তাহলে আপনার শরীরে বেশি ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা রয়েছে। তাহলে বুঝতেই পারছেন শরীরের সুস্থ রাখতে ব্যায়াম কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম এর মাধ্যমে শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। ব্যায়াম শরীর সতেজ রাখতে সাহায্য করে। 

ত্বকের যত্নঃ শীত থেকে মুক্তি পেতে অবশ্যই শরীর ও ত্বকের যত্ন নিতে হবে। প্রয়োজনে আপনি গরম পানি ব্যবহার করুন তবুও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে আপনি শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন। অপরিষ্কার থাকলে জীবাণু আক্রান্ত করবে এবং তা থেকে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। হাত-পা কোমল রাখতে নতুন ব্যবহার করুন। 

নিয়মিত গোসলঃ অনেকেই ঠান্ডার কারণে দীর্ঘদিন গোসল না করেই থাকেন। এতে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। নিয়মিত গোসল না করলে শীত বেশি লাগে শরীরে। প্রয়োজনে পানি হালকা গরম করে নিন এবং গরম পানিতে গোসল করুন। নিয়মিত গোসল করলে শরীরে এত ঠান্ডা লাগবে না পাশাপাশি আপনি ফ্রেশ অনুভব করবেন। দীর্ঘদিন পরে পরে গোসল করলে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণ

ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণ কি? চলুন এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাক। শারীরিক বিভিন্ন পুষ্টির অভাবে ঘন ঘন ঠান্ডা লাগতে পারে। আবহাওয়া পরিবর্তন হলেই দেখা যায় শারীরিক অসুস্থতা চলে আসে। এটা মনে করবেন না যে আবহাওয়া পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে শরীর খারাপ হওয়া স্বাভাবিক। মাসে যদি আপনি দুই থেকে তিনবার অসুস্থ হয়ে যান অর্থাৎ ঠান্ডা লেগে সর্দি কাশি হয় তাহলে বুঝে নিবেন আপনার শরীরে দুর্বলতা রয়েছে বা পুষ্টির অভাব রয়েছে।

আরো পড়ুনঃ শীতে সর্দি কাশি থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়

  • এলার্জি বা চুলকানিঃ এলার্জি বা চুলকানির কারণে ঘন ঘন ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। যাদের এলার্জির সমস্যা আছে তাদের মুহূর্তের মধ্যেই চোখ মুখ দিয়ে পানি চলে আসে। তাই এলার্জি রয়েছে এমন খাবার বা জিনিসপত্র থেকে দূরে থাকুন। শুধু খাবার নয় ধুলোবালি থেকেও এলার্জি হয়ে থাকে। 
  • ব্রংকাইটিসঃ ব্রংকাইটিস রোগেও ঘন ঘন ঠান্ডা লাগতে পারে। আসলে এলার্জি অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে গেলে বা বেশি বেশি আপনার শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিলে ব্রংকাইটিস রোগে পরিণত হয়। তখন একটু অনিয়ম করলে সারা বছরই ঠান্ডা লাগার সমস্যা দেখা দেয়। 
  • হাঁপানিঃ ধুলোবালি বা ঠান্ডা খাবার থেকে হাঁপানির সমস্যা দেখা দিতে পারে। হাঁপানির সমস্যা দেখা দিলে শ্বাসকষ্ট হয়। আর যারা হাঁপানির রোগী তাদের অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যায়। অন্য কোথাও গিয়ে শুধু  পানি খেলেও ঠান্ডা লাগার সমস্যা দেখা দেয়।
  • অপরিষ্কারঃ বিশেষ করে দেখবেন যারা বেশি অপরিষ্কার থাকে তাদের একটু বেশিই অসুস্থ হতে দেখা যায়। নিয়মিত হাত-পা, শরীর এবং জামা কাপড় পরিষ্কার করা উচিত। নোংরা শরীরে থাকলে জীবাণু আক্রমণ করে এবং অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। 
  • ইমিউনিটিঃ যাদের শরীরে ইমিউনিটি কম অর্থাৎ পুষ্টির অভাব রয়েছে তারা বেশি অসুস্থ হয়। তাই পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করবে। অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে অর্থাৎ ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার সমস্যা দূর হবে।
  • সাইনোসাইটিসঃ অতিরিক্ত সর্দি বা এলার্জির কারণে এটি এক সময় সাইনোসাইটিস রোগে রূপ নেয়। সাইনোসাইটিস হলে মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, কান ব্যথা ইত্যাদি আরও অনেক সমস্যা হয়ে থাকে। এ সমস্যা হলে জ্বর এবং অতিরিক্ত সর্দি দেখা দেয়। তাই সময় নষ্ট না করে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এটি মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেলে বধির পর্যন্ত হয়ে যেতে পারেন।
  • নিউমোনিয়াঃ যারা নিউমোনিয়ার রোগী রয়েছেন তাদের সাবধানে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিউমোনিয়ার রোগীদের ঘন ঘন ঠান্ডা লেগে যায়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের গলা ব্যথা সর্দি লেগেই থাকে। অতিরিক্ত সমস্যা হলে শ্বাসকষ্ট ও দেখা দিতে পারে। তাই শরীরে অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম লাগানো থেকে সাবধানে থাকুন। 
  • সংক্রামকঃ অতিরিক্ত এলার্জি বা অপরিষ্কার থাকার কারণে বেশি বেশি ঠান্ডা লাগার সমস্যা হতে পারে। আর বেশি ঠান্ডা লাগলে একসময় তার শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানিতে পরিণত হবে। সংক্রামক এর কারণে মাথাব্যথা, জ্বর, সর্দি, বুক ব্যথা, নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত অসুস্থ হলে বা অতিরিক্ত সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া বাধ্যতামূলক।
  • প্রদাহঃ অপরিষ্কার থাকলে বা ধুলোবালির মধ্যে বেশি চলাফেরা করলে নাক বুক জ্বালা করে এবং একসময় তা ঠান্ডা লাগায় পরিণত হয় অর্থাৎ সর্দি জ্বর লেগে যায়।

হঠাৎ শরীরে শীত শীত লাগার কারণ 

হঠাৎ শরীরে শীত শীত লাগার কারণ কি? শরীরে হঠাৎ করে শীত শীত অনুভব হচ্ছে? মনে হচ্ছে জ্বর আসবে? বুঝতে পারছেন না কেন এমন হলো? চলুন জেনে নেওয়া যাক এর কারন কি। তা হঠাৎ করে শরীরের এমন অনুভূতি দেখা দিলে বুঝতে হবে আপনার শরীর দুর্বল অথবা অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জ্বর আসার পূর্বে শরীরে শীত অনুভূত হয়। অনিয়মের কারণেও এমন হতে পারে।  

শীত-বেশি-লাগার-কারণ
শরীরে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দিলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়াও শরীরে রক্তের শূন্যতা দেখা দিলে শীত বেশি লাগে। তাই পর্যাপ্ত খাবার এবং পুষ্টিকর খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরীরে ঘাটতি সমূহ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে পূরণ করা দরকার। পুষ্টিকর খাবার খেয়ে রক্তশূন্যতা দূর করতে হবে তাহলে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। ঠান্ডা লেগে গেলে যেমন জ্বর আসতে পারে তেমনি অতিরিক্ত গরমেও সর্দি কাশি হতে পারে। 

শরীরে অতিরিক্ত গরম লাগলে ঘাম বসে গিয়ে জ্বর চলে আসে। এ সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং রোগের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করতে হবে। প্রয়োজনে গরম পানি পান করুন, গরম পানি দিয়ে গোসল করুন অর্থাৎ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন। শরীরের রক্তশূন্যতা দূর করার চেষ্টা করুন। এছাড়াও থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি দেখা দিলে শীত লাগার অনুভূতি হয় এবং শরীরে চর্বির ঘাটতি থাকলেও শীতে লাগে। তাই এই ঘাটতি গুলো পূরণ করার চেষ্টা করুন।

গরমকালে ঠান্ডা লাগার কারণ 

গরমকালে ঠান্ডা লাগার কারণ কি জেনে নিন আজকের ব্লগ পোস্টে। অনেক সময় শরীরে গরম কালেও ঠান্ডা অনুভূতি হয়। টেনশনের কিছু নেই। সাধারণত কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকলে শরীর অনেক ঘেমে যায়, বাতাসে আদ্রতা কম থাকার কারণে ঘাম শুকাতে দেরি হতে পারে। শরীরে দীর্ঘ সময় ঘাম থাকলে তখন ঠান্ডা অনুভূতি হয়। এছাড়াও ঘাম থাকা অবস্থায় ফ্যানের বাতাসে গেলে বা শরীরে বাতাস লাগলে মনে হয় আরো বেশি ঠান্ডা লাগছে। 

এটি চিন্তার কিছু না স্বাভাবিক একটি বিষয়। ঘাম সঙ্গে সঙ্গে শুকিয়ে গেলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম তবে অবশ্যই মনে রাখবেন ঘাম যদি শরীরে বসে যায় বা শরীরে দীর্ঘ সময় থাকে তাহলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। এভাবেই গরম কালেও ঠান্ডা লেগে যেতে পারে এবং সর্দি কাশি দেখা দিতে পারে। এ বিষয়ে খেয়াল রাখবেন। এছাড়াও গরম কালে পাতলা এবং আরামদায়ক পোশাক পড়ার চেষ্টা করবেন। এতে শরীর ঘামার সম্ভাবনা কম। 

আবার গরম কালে ঠান্ডা লাগার কারণ হতে পারে জ্বর আসার লক্ষণ। কোন কারন ছাড়াই যদি মনে হয় শরীরে ঠান্ডা অনুভূতি হচ্ছে এতো গরমের মধ্যেও তাহলে বুঝে নেবেন আপনার শরীরে জ্বর আসতে পারে। তাই এ সময় একটু সাবধানে থাকবেন। পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তাহলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবেন তাহলে জীবাণু থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। ভাইরাস আক্রমণের কারণেই জ্বর সর্দি হয় তাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

কোন ভিটামিনের অভাবে ঠান্ডা লাগে 

কোন ভিটামিনের অভাবে ঠান্ডা লাগে চলুন জেনে নেওয়া যাক। শরীরের দুর্বলতা বেড়ে গেলে এবং শরীরে ভিটামিনের অভাব থাকলে অতিরিক্ত অসুস্থ হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। তাই পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজন। শুধু পেট ভরে ভাত খেলেই তাকে স্বাস্থ্যকর খাবার বলে না। শরীরের প্রয়োজনীয় সকল ভিটামিন এবং উপাদান আপনার খাবারে থাকতে হবে তবেই তা স্বাস্থ্যকর খাবার হবে। চলুন দেখে নেওয়া যাক কোন ভিটামিনের অভাবে ঠান্ডা বেশি লাগে। 

আরো পড়ুনঃ নিম পাতার উপকারিতা এলার্জি দূর করণে

ভিটামিন-সি এর অভাব দেখা দিলে শরীরে রক্ত তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটে। শরীরে পর্যাপ্ত রক্ত তৈরী না হলে বা রক্তশূন্যতায় ভুগলে অতিরিক্ত ঠান্ডা অনুভূতি হয়। রক্ত শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই ভিটামিন-সি যুক্ত ফল অথবা সবজি খাওয়ার চেষ্টা করবেন। খাবারের পাশাপাশি ভিটামিন-সি যুক্ত যেকোনো ফল রাখতে পারেন। যেমনঃ লেবু, কমলালেবু, পেয়ারা, স্ট্রবেরি, খেজুর ইত্যাদি।

এছাড়াও ড্রাই ফুড খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারেন এগুলো শরীরের রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। যেমনঃ কিসমিস, বাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম ইত্যাদি। এছাড়াও আয়রন যুক্ত সবজি আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। যেমন: লাল শাক, কচু শাক, পালং শাক, কলার মোচা, ডুমুর কলার থোর ইত্যাদি। এসব সবজি পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত। এগুলো আয়রনের শূন্যতা পূরণ করে রক্ত তৈরিতে সাহায্য করবে। 

এছাড়াও ভিটামিন-সি এর অভাব পূরণ করতে সাহায্য করবে। ভিটামিন-সি এর অভাব পূরণ হলে ঘনঘন ঠান্ডা লাগবে না অর্থাৎ আপনি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বেন না। এছাড়াও ভিটামিন-সি চুল এবং ত্বকের যত্নে অত্যন্ত উপকারী। এটি শরীরের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। তাই পর্যাপ্ত ভিটামিন যুক্ত এবং পুষ্টি উপাদান রয়েছে এমন খাবার গ্রহণ করুন। এবং শরীরকে ভেতর থেকে স্বাস্থ্যবান করে তুলুন। তাহলেই ঠান্ডা লাগার সমস্যা রোধ করতে পারবেন।

ঘন ঘন সর্দি লাগার কারণ 

ঘন ঘন সর্দি লাগার কারণ জেনে নিন আজকের ব্লগ পোস্টে। সর্দি লাগলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তবে ঘন ঘন সর্দি একটু চিন্তার কারন হয়ে দাঁড়ায়। ঘন ঘন সর্দি হতে পারে কোন রোগের লক্ষণ। এছাড়াও শরীরে পুষ্টি শূন্যতা দেখা দিলে সর্দি-কাশি, জ্বর লেগেই থাকে। অতিরিক্ত সর্দি দেখা দিলে শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা হয়। দৈনন্দিন জীবনে চলাফেরা খুবই কষ্টকর হয় অতিরিক্ত সর্দি লাগলে। এছাড়াও ভালো করে কথা ও বলা যায় না, মাথা ভারী হয়ে থাকে মুখে অরুচি সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। চলুন দেখে নেওয়া যাক ঘন ঘন সর্দি লাগার কারণঃ

  • সাইনুসাইটিস রোগের কারণে অতিরিক্ত সর্দি লাগতে পারে। 
  • এলার্জির কারনে ঘন ঘন সর্দি দেখা দিতে পারে।
  • ধুলোবালি নাকে মুখে ঢুকে গেলে সর্দি লেগে যেতে পারে। 
  • ঠান্ডা লাগার কারণে অনেক সময় দ্রুত সর্দি লেগে যায় তাই গরম পোশাক পরিধান করুন।
  • শরীরে মিউকাস বেশি উৎপন্ন হলে তা সর্দি আকারে বেরিয়ে যায়। 
  • অতিরিক্ত ধূমপান করলে সর্দি বেশি লাগতে পারে। 
  • মানসিক চাপের কারণেও সর্দির সমস্যা হয়। 
  • শরীর অতিরিক্ত ক্লান্ত থাকলে ঘন ঘন সর্দি লাগতে পারে। 
  • শরীরে পুষ্টি উপাদান এবং ভিটামিনের অভাব দেখা দিলে ঘন ঘন সর্দি লাগে। 
  • হাঁপানি রোগ থাকলে ঘন ঘন সর্দি লাগতে পারে। 
  • ভিটামিন-ডি এর অভাব দেখা দিলে, সর্দি লাগার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ঘন ঘন সর্দি লাগতে পারে। 
  • দীর্ঘস্থায়ী কোন রোগে আক্রান্ত থাকলে অতিরিক্ত সর্দি দেখা দিতে পারে। 

সর্দি প্রতিরোধ করার উপায় 

সর্দির প্রতিরোধ করার উপায় সম্পর্কে জেনে নিন বিস্তারিত। স্বাভাবিক ভাবে সর্দি লাগলে তা কিছুদিন পরেই ঠিক হয়ে যায়। শীতকালে সর্দি লাগলে গরম পানি পান করলে এবং গরম পোশাক পড়ে সাবধানে চলাফেরা করলে দেখা যায় কিছুদিন পরে সর্দি ঠিক হয়ে যায়। কোনো মেডিসিন নেওয়ার দরকার হয় না। সর্দির সময় সর্দি ঝেড়ে ফেলা উচিত। মেডিসিন নিলে সর্দি বুকে বসে যেতে পারে এবং তা থেকে কাশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

তবে অতিরিক্ত সর্দি লাগলে খুবই সমস্যা দেখা দেয় দৈনন্দিন জীবনে। সর্দির কারণে মুখের স্বাদ হারিয়ে যায় পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিছু রোগে আক্রান্ত থাকলে অতিরিক্ত সর্দি লাগার সম্ভাবনা রয়েছে যা উপরে আলোচনা করেছি। কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে সর্দি এড়ানো সম্ভব। সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কথায় আছে স্বাস্থ্যই মূল সম্পদ। চলুন দেখে নেওয়া যাক সর্দি প্রতিরোধের উপায়ঃ

  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। 
  • পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে। 
  • শুয়ে বসে না থেকে একটিভ থাকার চেষ্টা করুন অর্থাৎ নিয়মিত ব্যায়াম করুন। 
  • ধূমপান বর্জন করতে হবে। 
  • নেশা জাতীয় দ্রব্য বা মদ পান করা যাবে না। 
  • ভিটামিন-ডি এর অভাব পূরণ করতে হবে। ভিটামিন-ডি যুক্ত খাবার, সবজি, ফল অথবা সাপ্লিমেন্ট ডাক্তারের পরামর্শে খেতে পারেন।
  • শীতকালে সবসময় ঘরে বসে না থেকে কিছুটা সময় রোদ পোহাতে পারেন এতে ভিটামিন-ডি এর অভাব পূরণ হবে। 
  • এলার্জি রয়েছে এমন খাবার পরিত্যাগ করুন। এলার্জি থেকে মুক্তি পেতে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। 
  • শরীরকে ঠান্ডা লাগা থেকে রক্ষা করুন অর্থাৎ গরম পোশাক পরিধান করুন।
  • অতিরিক্ত কাজের মধ্যে থাকলে বা ব্যস্ত থাকলে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়, মানসিক চাপ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করুন। 

শীতকালে গোসল করার উপায় 

শীতকালে গোসল করার উপায় জেনে নিন। শীতকালে গোসল করতে অনেকেই ভয় পান। অতিরিক্ত শীত পড়ে গেলে গোসল করা খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তবে দীর্ঘদিন গোসল না করে থাকাও উচিত না। এতে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় এবং শরীর শুকিয়ে যেতে পারে। এখন ভাবছেন তো শীতকালে গোসল করার উপায় কি? চলুন দেখে নেওয়া যাক শীতকালে গোসল করার উপায়ঃ

শীত-বেশি-লাগার-কারণ
গোসল করার আগে গোসল করার পানি হালকা কুসুম গরম করে নিন। তবে খেয়াল রাখবেন পানি যেন অতিরিক্ত গরম না হয় তাহলে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। গোসলের পরে যে পোশাকটি পরিধান করবেন তা কিছুক্ষণ রোদে দিয়ে রাখুন গোসলের আগেই। অর্থাৎ রোদে জামাকাপড় মেলে দিয়ে গোসল করতে যান। গোসল হয়ে গেলে উঠে এসে গরম পোশাক পড়তে পারবেন। যাই হোক, গোসল করার সময় প্রথমে হাত, তারপরে পা, তারপরে কোমর এভাবে ভেজাবেন না। 

এতে শরীরে বেশি ঠান্ডা অনুভূতি হয়। একবারে মাথায় পানি ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে শরীর শিউরে উঠবে না। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন গরম পানি মাথায় অর্থাৎ চুলের গোড়ায় লাগানো উচিত নয় এতে চুল দুর্বল হয়ে যায় এবং চুল পড়ে যেতে পারে। চেষ্টা করবেন মাথায় ঠান্ডা পানি দেওয়ার। এতে মাথা ঠান্ডা থাকবে চুলেরও কোন ক্ষতি হবে না। হালকা গরম পানি মুখে, গলায়, ঘাড়ে অর্থাৎ পুরো শরীরেই দিতে পারেন।

গোসল করতে বেশি সময় নিবেন না দ্রুত গোসল শেষ করবেন। গোসলের সময় বডি ওয়াশ, সাবান বা ফেসওয়াশ কিছুটা ব্যবহার করতে পারেন, তবে অতিরিক্ত না কারণ অতিরিক্ত ব্যবহারে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি গোসল করে উঠে শরীরের পানি মুছে নিবেন। শুকনো টাওয়াল দিয়ে শরীরের সব পানি দ্রুত মুছে নিন। তারপরে রোদে দেওয়া গরম পোশাক পরিধান করুন এতে অনেকটাই কম ঠান্ডা লাগবে। 

গোসল থেকে উঠে ময়েশ্চেরাইজার ব্যবহার করুন। গোসল শেষে রোদে বসলে অনেক আরাম পাওয়া যায় তবে রোদে বসার আগে ত্বকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভুলবেন না। শীতকালের রোদ কম থাকলেও রোদে থাকে ইউভি রশ্মি যা ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। হাতে পায়ে গ্লিসারিন গোলাপজল অথবা লোশন ব্যবহার করুন। এটিই হাত-পা কোমল রাখতে সাহায্য করবে এবং পা ফাটা রোধ করবে। এভাবে শীতকালে গোসল দিতে পারেন।

শীতকালে গোসল করার উপকারিতা 

শীতকালে গোসল করার উপকারিতা সম্পর্কে আজকের পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করবো। অনেকেই আছেন যারা অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগার কারণে শীতকালে গোসল করতে চান না। তবে আপনি জানলে অবাক হবেন ঠান্ডা লাগার একটু অন্যতম কারণ নিয়মিত গোসল না করা। শুধু ঠান্ডা লাগা নয় নিয়মিত গোসল না করলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই শীতকালে গোসল করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলুন দেখে নেওয়া যাক শীতকালে গোসল করার উপকারিতাঃ

আরো পড়ুনঃ সজিনা পাতার উপকারিতা-ডায়াবেটিস রোগীর সজিনা পাতা খাওয়ার নিয়ম

  • প্রথমেই বলতে চাই শীতকালে গোসল করলে শরীরে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগে না। অর্থাৎ বুঝাতে চাচ্ছি শীতকালে গোসল না করে থাকলেই বরং বেশি ঠান্ডা লাগে। তাই নিয়মিত গোসল করার চেষ্টা করবেন। 
  • শীতকালে নিয়মিত গোসল করলে শরীর সতেজ থাকে। 
  • শীতকালে নিয়মিত গোসল করলে এলার্জির সমস্যা এড়ানো যায়। 
  • নিয়মিত গোসল করলে অলসতা কেটে যায় এবং কাজে মনোযোগী হওয়া যায়। 
  • শরীরের জড়তা এবং চোখ মুখের ঝিমঝিমানি রোধ করা সম্ভব নিয়মিত গোসল করার মাধ্যমে।
  • শারীরিক এবং মানসিক ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে, শীতকালে নিয়মিত গোসল করলে।
  • শীতকালে নিয়মিত গোসল করলে মন ভালো থাকে।
  • বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন শীতকালে অতিরিক্ত গম্ভীর হয়ে বসে থাকলে তা মানসিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই নিয়মিত গোসল করে একটিভ থাকার চেষ্টা করবেন। 
  • শীতকালে নিয়মিত গোসল করলে শরীরে কোন জীবাণু আক্রমণ করতে পারে না। 
  • শীতকালে নিয়মিত গোসল করলে শরীরের দুর্গন্ধ রোধ করা যায়। 
  • ত্বকের ধুলাবালি দূর করে ত্বক সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
  • শীতকালে নিয়মিত গোসল দিলে অতিরিক্ত ব্রণের সমস্যা রোধ করা যায়। কারণ শীতকালে ব্রণ বেড়ে যায় কম বেশি আমরা সকলেই জানি। 
  • ত্বকের অথবা হাত পায়ের কালচে দাগ দূর করতে সাহায্য করে। তাই শীতকালে অবশ্যই নিয়মিত গোসল দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

মন্তব্যঃ শীত বেশি লাগার কারণ 

শীত বেশি লাগার কারণ কি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আজকের ব্লক পোস্টে। এছাড়াও আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করেছি ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার কারণ, হঠাৎ করে শীত শীত লাগার কারণ এবং গরমকালে ঠান্ডা লাগার কারণ সম্পর্কে। আশা করি কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছেন। ওপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে কি সমস্যা থাকলে শরীরে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগে। এ ধরনের সমস্যা যদি আপনার শরীরেও থাকে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। 

শীতকালে যাদের গোসল করতে কষ্ট হয় তাদের জন্য আজকের পোস্টটি অনেক উপকারী হবে। শীতকালে গোসল দেওয়ার উপায় এবং শীতকালে গোসল দেওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এই নিয়মগুলো মেনে গোসল করলে গোসল করতে কিছুটা হলেও কম কষ্ট হবে অর্থাৎ ঠান্ডা কম লাগবে। শীতকালে গোসল করা অত্যন্ত উপকারী শরীরের জন্য তাই দীর্ঘদিন গোসল না করে থাকবেন না। সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। শীতকালে গোসল করার উপায় গুলো বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করুন।

 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডেইলি ডাইরির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url