খেজুরের রস খাওয়ার সর্তকতা
খেজুরের রস খাওয়ার সর্তকতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো আজকের ব্লক পোস্টে। খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। নতুবা শরীরে বড় ধরনের অসুখ বাসা বাঁধতে পারে। খেজুরের রস সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ুন।
খেজুরের রস খাওয়ার সতর্কতার পাশাপাশি আজকের ব্লগ পোস্টে জানতে পারবেন খেজুরের রস এর উপকারিতা, অপকারিতা এবং গর্ভাবস্থায় খেজুর এর রস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। এছাড়াও আজকের পোস্ট হতে জানতে পারবেন খেজুরের রস সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে।পেইজ সূচিপত্রঃ খেজুরের রস খাওয়ার সর্তকতা
- খেজুরের রস খাওয়ার সতর্কতা
- খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা
- খেজুরের রস খাওয়ার অপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা
- বাচ্চাদের খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা
- ভালো খেজুরের রস চেনার উপায়
- খেজুরের রস কিভাবে তৈরি হয়
- খেজুরের রস সংরক্ষণ
- খেজুরের গুড় তৈরির প্রক্রিয়া
- মন্তব্যঃ খেজুরের রস খাওয়ার সতর্কতা
খেজুরের রস খাওয়ার সতর্কতা
খেজুরের রস খাওয়ার সতর্কতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে আজকের ব্লগ পোস্টে। সব ধরনের খাবার খাওয়ার আগে স্বাস্থ্য সতর্ক থাকতে হবে। তবে খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে হবে। কারণ খেজুরের রসে মারাত্মক ভাইরাস থাকতে পারে। যা হতে পারে মৃত্যুর কারণ। এখন কি চিন্তায় পড়ে গেলেন? ভাবছেন খেজুরের রস খাওয়া বাদ দিয়ে দিব কিনা? না খেজুরের রস খাওয়া বাদ দিতে হবে না তবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
চলুন এ বিষয়ে আলোচনা করা যাকঃ সাধারণত শীতকালে খেজুরের রস সংরক্ষণ করা হয় খেজুর গাছ থেকে। শীত বাড়ার পাশাপাশি খেজুরের রস ও বৃদ্ধি পায়। প্রথমের দিকে অল্প অল্প খেজুরের রস পাওয়া গেলেও পরে ধীরে ধীরে অনেক বেশি খেজুরের রস পাওয়া যায় খেজুর গাছ থেকে। খেজুর গাছের মাথায় হালকা নরম অংশ থাকে সেইখানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হালকা বাঁকা করে কাটা হয়।
আরো পড়ুনঃ কলার মোচার ১৫ টি কার্যকারী উপকারিতা
কেটে গাছের ভেতরের সাদা অংশ বের করা হয় ওপরের যে ডাল গুলো বাদ দেওয়ার প্রয়োজন সেগুলো কেটে বাদ দিতে হয়। তারপর সেই জায়গাটি পরিষ্কার করে নিয়ে সেখানে টিনের একটি চোখা চামচের মতো দেখতে পাতলা টিন ঢোকানো হয়। সেই টিনের মাধ্যমে গাছের ভেতরে থাকা রস চুইয়ে বের হয়ে আসে হাড়িতে। রস যেন মাটিতে পড়ে নষ্ট না হয় বা সংরক্ষণ করতে চামচ এর নিচেই পাতিল রাখা হয়।
পাতিলে গলায় দড়ি দিয়ে বেঁধে নেওয়া হয়। তারপর দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় পাতিলটি ভরে যায়। কমবেশি হতে পারে। রাতের বেলা কুয়াশার কারণে রস একটু বেশি ঝরে। সকাল বেলা গাছ থেকে নামিয়ে ছেঁকে নিয়ে কেউ খায় কেউ জাল করে গুড় তৈরি করে। এভাবেই রসের কার্যক্রম চলে। এখন ভাবছেন এই কাজে আবার সতর্কতা কি অবলম্বন করব? আর সতর্কতা অবলম্বন না করলেই বা কি ক্ষতি হবে?
সতর্কতাঃ
বাদুড় আপনারা সকলেই চেনেন আশা করছি। বাদুড় ডুমুর গাছে তুলার গাছে থাকে। তারা চোখে দেখতে পায় না সাউন্ড সিস্টেম দিয়ে তাদের চলাফেরা। যাই হোক, বাদুড়ের পছন্দের খাবার খেজুরের রস। যখন গাছে রস ঝড়ার জন্য গাছটি তৈরি করা হয় বা পাতিল ঝুলিয়ে রাখা হয় তখন রাতের বেলা বাদুর এসে সেই পাতিল থেকে রস খায়। আর বাদুড়ের মুখের লালা রসের মধ্যে পড়ার সম্ভাবনা প্রায় ১০০ পার্সেন্ট।
বাদুড়ের লালায় থাকে নিপা ভাইরাস। যা মানুষের শরীরে গেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আমরা কমবেশি সকলেই জানি করোনা ভাইরাসের উৎপাত হয় বাদুরের লালার নিপা ভাইরাস থেকে। তাহলে বুঝতেই পারছেন এটি কতটা মারাত্মক। শুধু বাদুর না অন্যান্য পাখি ও এসে খেতে পারে এমনকি গাছে সাপ সহ বিভিন্ন বিষাক্ত পোকামাকড় থাকতে পারে। তাই এটি ঝুঁকি পূর্ণ মানব দেহের জন্য।
অনেককেই আবার রসের পাতিল এর ওপর পাতলা জাল রেখে আসে যেন কোন পোকামাকড় তার ভেতরে না পড়ে। কিন্তু আপনারাই ভেবে দেখুন, যদি পাতিলের ওপর কোন পাখি অথবা বাদুর এসে বসে সেটা যদি খেতে নাও পারে অবশ্যই খাওয়ার চেষ্টা করবে তখন তাদের মুখের লালা তো রসের মধ্যে পড়তেই পারে। তাহলে এভাবে কি নিরাপদ করা সম্ভব খেজুরের রস? কখনোই না। এভাবে খেজুরের রস নিরাপদ হয় না। তাহলে কি করা যায়?
সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করতে খেজুরের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকা ভালো কারণ নিপা ভাইরাস খুবই মারাত্মক। এই ভাইরাস প্রতিরোধে কোন টিকা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি বা এর কোন চিকিৎসা কার্যকর নেই। ছোট বাচ্চাদের খেজুরের রস না খাওয়ানোই ভালো। আর যদি মনে করেন খেজুরের রস খাবেন, এটি খুবই পছন্দের খাবার তাহলে উপায় কি? খেজুরের রস সকালে গাছ থেকে নিয়ে আসার সাথে সাথে ছেঁকে নিয়ে খেয়ে ফেলবেন না।
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং শরীরকে সুরক্ষিত রাখতে খেজুরের রস হালকা জাল করে নিন। তাই বলে মনে করেন না যে আমি গুড় বানাতে বলছি। খেজুরের রস পাতিলে দিয়ে গরম করুন বলক উঠলেই নামিয়ে ঠান্ডা করে নিন তারপরে খেয়ে নিন। যদি মনে করেন ঠান্ডা খেজুরের রস খাবো তাহলে কিছুক্ষণ রেখে দিন শীতের মধ্যে তরল পদার্থ একটু পরেই ঠান্ডা হয়ে যায়। খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে খেজুরের রসের প্রতি একটু সতর্ক হবেন।
যদি খেজুরের রস সাদা সাদা চুন দেওয়া ঘোলা পানির মত হয় তাহলে সেই খেজুরের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। আর যদি খেজুরের রস ফ্রেশ টলটলে একদম পানির মত হয় তাহলে সেই খেজুরের রস ভালো। সেই খেজুরের রস খেতে পারেন। খেজুরের রসে যদি মৌমাছি পড়ে থাকে তাহলে বুঝে নিবেন যে খেজুরের রস মিষ্টি এবং ভালো খেতে হবে। খেজুরের খাওয়ার ক্ষেত্রে কেন সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং কিভাবে করতে হবে তা জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা
খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক। খেজুরের রস সাবধানতার সাথে পান করলে উপকৃত হবে। খেজুরের রস প্রাকৃতিক একটি খাবার এতে কোন সন্দেহ নেই এবং এটি স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। তবে কেন খেজুরের রস শরীরের জন্য মারাত্মক হতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা করেছি। চলুন এখন জেনে নেওয়া যাক খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতাঃ
আরো পড়ুনঃ কাঁচা ডুমুরের ২০ টি কার্যকারী উপকারিতা
- এনার্জিঃ খেজুরের রস পান করলে সঙ্গে সঙ্গে এনার্জি পাওয়া যায়। শরীরে ক্লান্তি দ্রুত হয়ে যায়। কারণ খেজুরের রসে রয়েছে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ।
- শক্তিঃ খেজুরের রস শরীরে শক্তির প্রদান করতে সাহায্য করে। কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- আয়রনঃ খেজুরের রসে রয়েছে আয়রন। যা শরীরে আয়রনের অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে।
- রক্ত বৃদ্ধিরঃ খেজুরের রস খেলে শরীরের রক্ত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। রক্তশূন্যতা পূরণ করতে সাহায্য করে আয়রন।
- মজবুত পেশীঃ খেজুরের রসে রয়েছে পটাশিয়াম ও সোডিয়াম। যা পেশিকে মজবুত করতে সাহায্য করে।
- সুস্থ দাঁতঃ দাঁতকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কারণ খেজুরের রসে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম।
- মজবুত হাড়ঃ খেজুরের রসে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে।
- ত্বকঃ টক সতেজ রাখতে খেজুরের রস খুবই উপকারী। কারণ খেজুরের রসে রয়েছে ভিটামিন-সি। এটি ত্বকের জন্য খুবই উপকারী কোষ সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
- ভিটামিনঃ শরীরের ভিটামিনের শূন্যতা পূরণ করে। খেজুরের রসে রয়েছে ভিটামিন-বি৩।
- ফাইবারঃ খেজুরের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। ফাইবার হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। খেজুরের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ইমিউনিটি সিস্টেম সুরক্ষিত রাখে।
- হজমঃ হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে খেজুরের রস। হজমের গড়মিল দেখা দিলে খাওয়ার পরে সামান্য পরিমাণে খেজুরের রস অথবা খেজুরের গুড় খেতে পারেন।
- কোষ্ঠকাঠিন্যঃ কোষ্ঠকাঠিন্য এর সমস্যা দেখা দিলে খেজুরের রস খেতে পারেন এটি এ সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- অনিদ্রাঃ ঘুমের সমস্যা থাকলে খেজুরের রস খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারেন এটি অনিদ্রার সমস্যা দূর করে এবং পর্যাপ্ত ঘুম হতে সাহায্য করে।
- পরিপাক ক্রিয়াঃ পরিপাক ক্রিয়া সচল রাখতে সাহায্য করে খেজুরের রস। পরিপাকে সমস্যা হলে খেজুরের রস অথবা খেজুরের গুড় খেতে পারেন।
খেজুরের রস থেকেই তৈরি হয় খেজুরের গুড়। তবে খেজুরের রসের থেকে খেজুরের গুড় খাওয়ায় আরো বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বৃদ্ধি করতে নিয়মিত খাবারের পর একটু করে খেজুরের গুড় খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারেন। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে অন্যান্য সমস্যা নিরাময় করতে সাহায্য করবে।
খেজুরের রস খাওয়ার অপকারিতা
খেজুরের রস খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। এতক্ষণ খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এখন জানতে পারবেন কারা খেজুরের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। খেজুরের রস নিয়ম মেনে খাওয়া উচিত। না হলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। চলুন দেখে নেওয়া যাক খেজুরের রস খাওয়ার অপকারিতা কি কিঃ
যথাঃ- ডায়াবেটিস রোগীঃ ডায়াবেটিস রয়েছে এমন কেউ খেজুরের রস না খাওয়াই ভালো। ডায়াবেটিস রোগী খেজুরের রস থেকে বিরত থাকবেন। কারণ খেজুরের রসে রয়েছে চিনি যার শরীরে সুগার লেভেল বাড়িয়ে দেয়। তখন বিপদে পড়তে পারেন।
- কিডনি সমস্যাঃ কিডনির সমস্যা রয়েছে এমন মানুষ খেজুরের রস থেকে বিরত থাকবেন কারণ খেজুরের রসে রয়েছে পটাশিয়াম যা কিডনির সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
- নিউমোনিয়াঃ নিউমোনিয়ার রোগী অথবা নিউমোনিয়া রয়েছে এমন বাচ্চাদের খেজুরের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এসব রোগী খেজুরের রস খেলে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে।
- হাঁপানিঃ হাঁপানির রোগী খেজুরের রস না খাওয়াই ভালো। কারণ শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- সর্দি কাশিঃ ঠান্ডা ঠান্ডা খেজুরের রস খেলে সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হতে পারেন। আবার সর্দি কাশি রয়েছে এমন লোক খেজুরের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন কারণ বুক চেপে যেতে পারে।
- পেট ব্যথাঃ অতিরিক্ত ঠান্ডা খেজুরের রস খেলে অথবা বেশি পরিমাণে খেলে পেট ব্যাথা হতে পারে।
- গ্যাস্ট্রিকঃ এমনকি গ্যাস্টিকের সমস্যাও দেখা দিতে পারে খেজুরের রস থেকে।
এইসব সমস্যা রয়েছে এমন ব্যক্তি খেজুরের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। সুস্থ থাকতে হলে এই নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে। কারণ আবেগের বসে এক গ্লাস খেজুরের রস খেয়ে নিলে পরে আরো সমস্যায় পড়তে পারেন। এছাড়াও মাথায় রাখবেন খেজুরের রস সকাল-সকাল খাওয়া ভালো। সূর্যের আলো উঠে গেলে খেজুরের রসে গাজন প্রক্রিয়ার শুরু হয়ে যায়। আর বেশিক্ষণ এভাবে থাকলে এটি অ্যালকোহলে পরিণত হতে পারে। তাই ফ্রেশ খেজুরের রস খেতে চাইলে সকাল সকাল খাওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা কি? চলুন জেনে নেওয়া যাকঃ গর্ভাবস্থায় খেজুরের রস খাওয়া খুবই উপকারী স্বাস্থ্যের জন্য। এটি শরীরের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। ভিটামিনের অভাব পূরণ করে শরীরকে শক্ত সামর্থ্য রাখে। তবে অবশ্যই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। খেজুরের রস ফ্রেশ এবং নিরাপদ তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই খেজুরের রস থেকে উপকারিতা পাওয়া সম্ভব। উপকারিতা সমূহঃ
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
- তৎক্ষণাৎ এনার্জিঃ খেজুরের রস খেলে তৎক্ষণাৎ এনার্জি পাওয়া যায়।
- শর্করাঃ শর্করার অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে।
- ফাইবারঃ এটি শরীরে ফাইবারের অভাব পূরণ করে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
- জরায়ুঃ খেজুরের রস গর্ভাবস্থায় খেলে এটি জরায়ু সংকোচনে সহায়তা করে।
- প্রসবঃ প্রসব ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ প্রসবকালে উপকার পাওয়া যায় গর্ভাবস্থায় খেজুরের রস খেলে।
- ভিটামিনঃ শরীরে ভিটামিনের অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে।
- খনিজঃ শরীরে খনিজ এর অভাব পূরণ করে।
- হাড় মজবুতঃ আর মজবুত করতে ভীষণ সাহায্য করে।
- বাচ্চার গঠনঃ বাচ্চার গঠনে সহায়তা করে। খেজুরের রসে রয়েছে ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম যা হাড় মজবুত করে বাচ্চার শারীরিক গঠনের সাহায্য করে।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্টঃ খেজুরের রসে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, হজমে সাহায্য করে এবং ত্বক সতেজ রাখে।
- রক্ত বৃদ্ধিঃ খেজুরের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন এটি রক্তশূন্যতা পূরণ করতে সাহায্য করে।
খেজুরের রস খাওয়ার তুলনায় খেজুরের গুড় খেলে আরো বেশি উপকার পাবেন। খেজুরের রস ঠান্ডা অবস্থায় খেলে বাচ্চা এবং শিশুর কিছু সমস্যা হতে পারে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ঠান্ডা খাওয়া উচিত না সর্দি কাশি দেখা দিতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত ঠান্ডা খেলে বাচ্চার নিউমোনিয়া হতে পারে। তাই খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। রস না খেয়ে খেজুরের গুড় অথবা লালি গুড় খাওয়া গর্ভাবস্থায় বেশি উপকারী বলে মনে করি।
বাচ্চাদের খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা
বাচ্চাদের খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে আজকের ব্লগ পোস্টে। আমরা ইতিমধ্যে জেনে গিয়েছি খেজুরের রস প্রাকৃতিক খাবার। তাই এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন। এটি শরীরের পুষ্টির অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে। খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও খুবই প্রয়োজনীয়। চলুন দেখে নেওয়া যাক বাচ্চাদের খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতাঃ
আরো পড়ুনঃ থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
খেজুরের রসে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বাচ্চাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও খেজুরের রসে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, খনিজ সোডিয়াম, আয়রন ইত্যাদি। যা দাঁতের মাড়ি মজবুত করতে সাহায্য করে এবং হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। বাচ্চাদের শরীর শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়াও শরীর রোগ জীবাণু সাথে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত হয়।
তবে অবশ্যই এ বিষয়গুলোতে খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চাদের খেজুরের রস খাওয়ানোর ক্ষেত্রে। তা হলোঃ অতিরিক্ত ঠান্ডা খেজুরের রস বাচ্চাদের খাওয়ানো যাবে না এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়াও সর্দি কাশি হতে পারে। তাই হালকা রোদ বের হলে বাচ্চাদের খেজুরের রস অল্প পরিমাণে দিতে পারেন। যেসব বাচ্চাদের নিউমোনিয়ার সমস্যা আছে সেসব বাচ্চাদের খেজুরের রস থেকে দূরে রাখাই ভালো।
ভালো খেজুরের রস চেনার উপায়
ভালো খেজুরের রস চেনার উপায় কি? এটাই ভাবছেন? চলুন এ বিষয়ে আপনাদের ধারণা দেওয়া যাক। আজকের পোস্ট সম্পূর্ণ পড়ে এক দেখাতেই ভালো খেজুরের রস চিনতে পারবেন। খেজুরের রস সকাল-সকাল খাওয়ার চেষ্টা করবেন। সকাল সকাল কুয়াশার মধ্যে খেজুরের রস যখন নিতে যাবেন তখন খেজুরের রসের এই বৈশিষ্ট্য গুলো খেয়াল করবেন। তা হলোঃ খেজুরের রস যদি চুম দেওয়া পানির মত ঘোলাটে হয় তাহলে এটি ভালো নয়।
আরো পড়ুনঃ কোয়েল পাখির ডিমের উপকারিতা
খেজুরের রস যত পানির মত পাতলা এবং দেখতে চকচকে টলটলে তরল সেই খেজুরের রস তত ভালো। দেখে যদি মনে হয় এটা টিউবয়েলের পানি তাহলে বুঝে নেবেন সেই খেজুরের রস অবশ্যই ভালো। খেজুরের রসে যদি দুই একটা মৌমাছি পড়ে থাকে তাহলে তা খারাপ ভাবে দেখবেন না। মিষ্টি খেজুরের রসে দুই একটা মৌমাছি থাকে। মৌমাছি থাকলে বুঝে নিবেন সেই খেজুরের রস অনেক মিষ্টি হবে।
এছাড়াও খেজুরের রস সকাল-সকাল খেলে তার স্বাদ ভালো থাকে। রোদ বের হওয়ার সাথে সাথে অর্থাৎ বেলা হতে থাকলে খেজুরের রসে গাজর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায় এবং খেজুরের রসের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। সেই খেজুরের রস খেলে আপনার শরীরে প্রতিক্রিয়া করতে পারে অর্থাৎ ঘুম বেশি হবে কারণ তা অ্যালকোহলে পরিণত হবে। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন আসল খেজুরের রস চেনার উপায়।
খেজুরের রস কিভাবে তৈরি হয়
খেজুরের রস কিভাবে তৈরি হয়? তা অনেকেই জানতে চেয়েছেন। গ্রামের মানুষের খেজুরের রস বা খেজুরের গাছ সম্পর্কে ধারণা আছে। শহরের মানুষ এ বিষয়ে নাও জানতে পারেন। চলুন আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করি খেজুরের রস কিভাবে তৈরি হয়ঃ খেজুরের রস পাওয়া যায় খেজুর গাছ থেকে। শীতকালে গাছ পরিপাটি করা হয় রস সংরক্ষণ করার জন্য। শীতকাল শুরু হলে খেজুর সংরক্ষণ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ নিম পাতার উপকারিতা এলার্জি দূর করনে
খেজুর গাছের মাথায় অর্থাৎ যেখানে ডাল পালা থাকে সেখানে একটু বাঁকা করে কেটে পরিষ্কার করে নেওয়া হয়। মাথার ডাল গুলো কেটে পরিষ্কার করতে হয়। খেজুর গাছের মাথায় হালকা পরল তুলে নিলেই সাদা অংশ বের হয়ে যায়। সেখানে চামচের মতো পাতলা টিনের অংশ লাগিয়ে দিতে হয়। সেইখান দিয়ে চুয়ে চুয়ে রস বের হয়। আর রস সংরক্ষণ করার জন্য গাছের মাথায় একটি পাতিল ঝোলানো হয়।
সেই পাতিলে সারারাত এবং সারা দিনে রস পরে ভরে যায়। দিনের রস এর তুলনায় রাতের রস বেশি টেস্ট। দিনের রস খাওয়া উচিত নয়। রাতের রস ফ্রেশ থাকে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় চাইলে দুইবার রস নামানো যায়। সারারাত রস ঝরে পাতিল ভরে যায় সকাল সকাল রস নামিয়ে নিয়ে এসে তা সংরক্ষণ করতে হয়। কেউ জাল করে লালি তৈরি করে রাখে আবার কেউ জাল করে শক্ত গুড় তৈরি করে।
খেজুরের রস সংরক্ষণ
খেজুরের রস সংরক্ষণ করতে চাইলে কি করা উচিত? চলুন এ বিষয়ে আপনাদের ধারণা দেওয়া যাক। দীর্ঘ সময়ের জন্য খেজুরের রস সংরক্ষণ করতে চাইলে তা গরম করতে হবে। বলক তুলে জ্বাল করে সংরক্ষণ করতে হবে। আপনার পছন্দমত সংরক্ষণ করতে পারবেন। যদি মনে করেন আমি খেজুরের রস সংরক্ষণ করবো পরে তার রস হিসাবে খাবো তাহলে অল্প গরম করতে হবে অর্থাৎ বেশিক্ষণ বলক তোলা যাবে না।
আর যদি লালি তৈরি করতে চান তাহলে একটু বেশিক্ষণ গরম করতে হবে অর্থাৎ বলক তুলতে হবে। এভাবে গরম করে ফ্রিজে রেখে দিলে আপনি দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণ করতে পারবেন এবং পরেও তা খেতে পারবেন। তবে খেজুরের রস গরম না করে সরাসরি ফ্রিজে রাখলে তার স্বাদ পর্যাপ্ত পরিমাণে পাবেন না। সেই রসের স্বাদ পরিবর্তন হয়ে যাবে কারণ তার ভেতরে অন্যান্য প্রক্রিয়া কার্যক্রম হবে। সে রস মাতিয়ে যাবে পরে তা খেতে পারবেন না।খেজুরের গুড় তৈরির প্রক্রিয়া
খেজুরের গুড় তৈরি প্রক্রিয়া কি? চলুন এ বিষয়ে আলোচনা করা যাকঃ খেজুরের গুড় তৈরি করতে হলে খেজুরের রস সংরক্ষণ করতে হয়। ইতিমধ্যে খেজুরের রস তৈরির প্রক্রিয়া এবং খেজুরের রস সংরক্ষণ প্রক্রিয়া ওপরে আলোচনা করেছি। খেজুরের রস অনেক বেশি জ্বাল করে বলক তুলতে হবে। তবে খেয়াল রাখবেন যে পাতিলে গরম করছেন তার নিচে যেন লেগে না যায়। কিছুক্ষণ পরপর নাড়তে হবে। যখন খেজুরের রস ঘন হয়ে আসবে তখন সব সময় নাড়তে হবে।
আরো পড়ুনঃ চুলের জন্য থানকুনি পাতার উপকারিতা
তারপর আপনি যেভাবে খেজুরের রস টি সংরক্ষণ করতে চান অর্থাৎ কেমন ঘন রাখবেন সেভাবে নামিয়ে নিবেন। লালি করতে চাইলে পাতলা নামাবেন আর যদি ঘন লালি করতে চান তাহলে ঘন করে জাল করবেন। লালি অনেকেই ভাতের সাথে খায়। লালি সংরক্ষণ করে রাখলে পিঠা তৈরি করা যায়। চাইলে আপনি লালি শক্ত গুড়েও পরিবর্তন করতে পারবেন। অনেক বেশি জাল করে বাটিতে রেখে দিবেন। কিছু সময় পর দেখবেন তা শক্ত ঘুরে পরিণত হয়েছে। এভাবেই খেজুরের গুড় তৈরি হয়।
মন্তব্যঃ খেজুরের রস খাওয়ার সতর্কতা
খেজুরের রস খাওয়ার সতর্কতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এছাড়াও আপনাদেরকে জানিয়েছি খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে। গর্ভাবস্থায় খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা এবং বাচ্চাদের খেজুরের রস খাওয়ার উপকারিতা ও সতর্কতা আলোচনা করেসি। আশা করছি কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছেন।
তাই অবশ্যই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে খেজুরের রস খাওয়ার চেষ্টা করবেন। অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যাওয়ার সমস্যা থাকলে খেজুরের রস খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন, খেতে চাইলেও অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। এছাড়াও স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে খেজুরের রসটা যে সুরক্ষিত তা নিশ্চিত করবেন। আজকের পোস্ট ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানাবেন।
ডেইলি ডাইরির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url