গরুর খামার পরিকল্পনা - আধুনিক পদ্ধতিতে গরুর খামার
গরুর খামার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চান? আপনার উত্তর হ্যাঁ হলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজকের ব্লগে আপনাদের সঙ্গে তুলে ধরবো গরুর খাবার পরিকল্পনা। এছাড়াও আজকের ব্লগে জানতে পারবেন আধুনিক পদ্ধতিতে গরুর খামার তৈরি সম্পর্কে।
বর্তমান সময়ে গরুর খামার জনপ্রিয় একটি উদ্যোগ। সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে আধুনিক
পদ্ধতিতে খাবার তৈরি করলে ব্যবসায় সফল হতে পারবেন। গরুর খাবার সম্পর্কে সকল তথ্য
জানতে সম্পূর্ন পোস্ট মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পেইজ সূচিপত্রঃ গরুর খামার পরিকল্পনা
গরুর খামার পরিকল্পনা
গরুর খামার পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন আজকের ব্লগে। প্রতিটা ব্যবসা
শুরু করার আগে একটি সুন্দর পরিকল্পনা থাকা অত্যন্ত জরুরী। অনেকেরই মনে হতে পারে
গরুর খাবার করতে আবার পরিকল্পনা কেন প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবটা হলো যেকোনো ব্যবসা
শুরু করার আগে একটি সুন্দর পরিকল্পনা থাকা দরকার। তবেই সঠিক বিনিয়োগ ও আর্থিক
হিসাব রেখে ব্যবসায় সফল হওয়া সম্ভব।
ব্যবসার পরিকল্পনাঃ
- গরুর খামার সম্পর্কে আপনার কিছু জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
- আপনার সম্পূর্ণ বিনিয়োগ সুন্দর করে হিসাব করে রাখবেন।
- গরুর বাজার সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।
- ব্যবসায় প্রতিযোগিতা কেমন তার সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে।
বাজারজাত পরিকল্পনাঃ
- যে পণ্য বাজারজাত করতে চাচ্ছেন তার হিসাব খাতায় লিখে রাখুন।
- আপনার পণ্যের বিক্রয় মূল্য হিসাব করে রাখুন।
- আপনি কোথায় আপনার পূর্ণ বিক্রয় করছেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশেপাশের বাজারের খোঁজ নিন এবং বিক্রয়ের জন্য সঠিক স্থান নির্বাচন করুন।
- বাজারজাত পণ্য প্রচার করুন মানুষের মাঝে।
- আপনার ব্যবসা বিস্তার করার চেষ্টা করুন। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কর্মী নিয়োগ দিন।
- সবচাইতে বড় কথা আপনার সকল খরচ বা নিয়োগ এর হিসাব রাখুন। অবশ্যই খরচ বা লাভ সম্পূর্ণ লিপিবদ্ধ রাখার চেষ্টা করবেন।
আর্থিক পরিকল্পনাঃ
- একটি খামার দার করাতে কত টাকা খরচ লাগছে তা প্রথমে হিসাব করে নিন।
- খাবার থেকে প্রতি মাসে কত টাকা আয় হবে তা কাগজ-কলমে হিসাব করুন।
- গরুর সকল খাবারের দাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করুন।
- গরুর খামার পরিচালনা করতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান অর্জন করুন।
- কর্মচারী রাখতে চাইলে তার ভেতর নির্ধারণ করুন। কত টাকা বেতন দিলে আপনার পোষাবে তা মাথায় রাখবেন এবং সে কর্মচারী সেই বেতনে কাজ করতে ইচ্ছুক হবে কিনা তারও খেয়াল রাখতে হবে।
- প্রত্যেক মাসে কত টাকা খরচ হবে তার একটি লিস্ট তৈরি করুন।
- আপনি খামার থেকে কত টাকার পণ্য বিক্রি করতে পারবেন তার হিসাব করুন।
- সম্পূর্ণ হিসাব লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করবেন। এতে আপনার সামনে পরিষ্কার হয়ে যাবে কত টাকা বিনিয়োগ করতে হবে এবং কত টাকা লাভ হতে পারে।
খামার স্থাপন
খামার স্থাপন করতে হলে আপনার অবশ্যই আধুনিক চিন্তা ভাবনা করতে হবে। খাবারের একটি
সুন্দর এবং অর্থমূল্য নাম নির্ধারণ করুন। যেন মানুষের খামারের কথা চিন্তা করলেই
আপনার খামারের নাম সবার আগে মাথায় আসে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার খাবার সম্পর্কে
প্রচার করুন। আপনার সার্ভিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করুন মানুষের
কাছে।
বাজার গবেষণা
বাজার গবেষণায় আপনার পারদর্শী হতে হবে। তবেই ব্যবসায় লাভ করা সম্ভব। আপনার যে
জিনিসটি প্রয়োজন বা ক্রয় করতে চান তা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করুন। কখন সেই
দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে বা কখন মূল্য কমে যেতে পারে তা সম্পর্কে সতর্ক
হোন। দ্রব্য মূল্য বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে তা সংরক্ষণ করুন আগে
থেকেই।
এমন কিছু ব্যসিক ধারনা আপনার মধ্যে থাকতে হবে। আপনার যে প্রোডাক্ট মানুষের সামনে
উপস্থাপন করতে চান তা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিন। আপনার যে প্রোডাক্ট বাজারজাত
করতে চান সে প্রোডাক্টের বাজারে চাহিদা কেমন তা বুঝার চেষ্টা করুন। এবং সে
ব্যবসায় প্রতিযোগিতা কেমন তার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করুন। বাজার মূল্য মাথায়
রেখে আপনার পণ্যের দাম নির্ধারণ করুন।
যে ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে পারেন তা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করুন
- গরুর খাবারের মূল্য বৃদ্ধিঃ লাভ লস এর হিসাব সঠিকভাবে করতে হলে গরুর খাবারের মূল্যের প্রতি নজর রাখতে হবে। গরুর খাবারের মূল্য হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই সমস্যা গুলোর কথা আগে থেকে বিবেচনা করলে সমাধান করা সহজ হবে।
- যেকোনো ধরনের অসুস্থতাঃ গৃহপালিত প্রাণীর যেকোনো ধরনের অসুস্থতা সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। এছাড়াও সঠিক সময় সঠিক পদক্ষেপ দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পশুর চিকিৎসায় খরচ হতে পারে তা সম্পর্কে জ্ঞান বা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মাথায় রাখতে হবে।
- গরুর স্বাস্থ্যঃ গরুর স্বাস্থ্যের সুস্থতা সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।
- রোগ প্রতিরোধঃ রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা জরুরী। যে সিজিনে যে রোগ হতে পারে তার প্রতিরোধ ব্যবস্থা আগে থেকেই রেডি রাখতে হবে।
- প্রাকৃতিক দুর্যোগঃ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা করার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার চেষ্টা করবেন।
- সাবধানতাঃ সাবধানতার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সচেতন থাকতে হবে। বড় বড় খাবারগুলোতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়। এটি আপনারাও করতে পারেন।
- মূল্য বৃদ্ধি ও মূল্য হ্রাসঃ এই বিষয়গুলোর প্রতি সতর্ক থাকতে হবে। কখন মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কখন মূল্য হ্রাস পাচ্ছে তার খোঁজখবর রাখতে হবে।
- অভিজ্ঞতা বৃদ্ধিঃ শুধু কাজ করলে হবে না অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির চেষ্টা করতে হবে। ভালো জিনিস এবং বৌদ্ধ চিলিশ চেনার দক্ষতা রাখতে হবে।
- অবাঞ্ছিত পরিস্থিতিঃ যেগুলো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে এবং সে খারাপ পরিস্থিতি থেকে বাঁচার জন্য একটি ব্যতিক্রম রাস্তা রাখতে হবে।
বিনিয়োগ
বিনিয়োগ এর বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার বাজেটের
ওপর নির্ভর করবে আপনার খাবার কেমন হবে। এছাড়াও বিনিয়োগের ওপরই লাভ লসের হিসাব
কষতে হবে। যেকোন ব্যবসার বিনিয়োগ হলো সেই ব্যবসার চালিকাশক্তি। আপনি কত টাকা
ইনভেস্ট করতে পারবেন তার উপর নির্ভর করবে আপনার খাবার এর ব্যবস্থাপনা। চলুন দেখে
নেওয়া যাক পদক্ষেপ গুলোঃ
- গবাদি পশুর থাকার জায়গাঃ গবাদি পশুর থাকার জায়গা তৈরি করতে অবশ্যই টাকার প্রয়োজন রয়েছে। আপনার বিনিয়োগ এর কিছু অংশ থাকার জায়গা তৈরি করতে খরচ হবে।
- পশু ক্রয়ঃ আপনার বাজেট অনুযায়ী কয়টি পশু ক্রয় করবেন তা হিসাব করে নিন। এটি সম্পূর্ণ আপনার বাজেটের ওপর নির্ভর করবে তাই বিনিয়োগ কত করতে পারবেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
- খাবারের খরচঃ গরুর খাবারের খরচ বহর করতে নূন্যতম একটি বাজেট নির্ধারণ করতে হবে। গরুর খাবারের খরচের মূল্য সম্পর্কে ধারণা নিন। সম্ভব হলে বাড়ির আশেপাশে জায়গা থাকলে ঘাস লাগিয়ে রাখুন।
- গরুর পরিচর্যাঃ গরুর শারীরিক পরিচর্যার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংরক্ষণ করুন।
- খাবারের পাত্রঃ গরুকে পানি খাওয়ানো অথবা খাবার খাওয়ানোর পাত্র সংরক্ষণ করুন।
- টিকা প্রদান বা যেকোন চিকিৎসাঃ নিয়মিত টিকা প্রদান এবং চিকিৎসার বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখবেন। গরুকে সুস্থ রাখতে এবং ব্যবসায় লাভ করতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- দেখাশোনাঃ গরুকে দেখাশোনার জন্য যদি লোক নিয়োগ বিয়োগ করে তাহলে তার ভেতর সম্পর্কে ভেবে রাখুন।
- অন্যান্য খরচঃ এছাড়াও রয়েছে কারেন্ট বিল এবং গরুকে গোসল করাতে মোটর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য খরচের প্রতি নজর দিতে হবে এবং একটি হিসাব কোষে রাখুন।
বাজেটের উৎস নির্ধারণ করুন
আপনার নিজের সঞ্চয় থাকলে আপনার জন্য খুবই উপকারী। আর না থাকলে মূলধন কোথায়
পাবেন? এক্ষেত্রে আপনাকে ব্যাংক সাহায্য করতে পারে। তবে এজন্য আপনার উচ্চ হারে
সুদ টানতে হবে। আপনি যদি আত্মীয় স্বজন, যেকোনো এনজিও, বন্ধু বান্ধব কারো কাছে
সাহায্য পান তাহলে এটি আপনার জন্য খুবই ভালো। আর এরকম সুযোগ আপনার না থাকলে
ব্যাংক থেকে ঋণ দিতে পারেন। চলুন জেনে নিই প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সমূহ কি কিঃ
- জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
- গ্যারেন্টার এর এনআইডি কার্ড এর ফটোকপি
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- আবেদনকারীর কর স্বীকৃতি রশিদ
- এক বছরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- চাকরিজীবী হলে বেতনের সনদ পত্র
- ইনকাম স্টেটমেন্ট
- ফ্ল্যাটের মালিক হলে কারেন্ট বিল বা ভাড়ার রশিদ বা মিউটেশন
- ওয়াইফ বা বাবা-মায়ের পরিচয় পত্র
ইনকাম সোর্স বাড়ানো
পশু পালন করার পাশাপাশি সেখান থেকে আর কিভাবে আয় করা যায় তার চিন্তা ভাবনা করা।
আপনার নির্বাচিত জায়গায় যদি দুধের চাহিদা বেশি হয় তাহলে দুধ বিক্রি করতে
পারেন। এছাড়াও দুধের ব্যতিক্রম হিসেবে মিষ্টি,ঘি,পনির অথবা যেকোনো মিষ্টান্ন
তৈরি করে বাজারজাত করতে পারেন। আপনাকে বুঝতে হবে করতে চাহিদা সবচাইতে বেশি।
প্রয়োজনের কর্মচারী নিয়োগ দিতে হবে।
গরুর গোবর পাউস করে বিক্রি করতে পারেন অথবা ঘুটা তৈরি করতে পারেন। এগুলো জ্বালানি
হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। এভাবেই চারিদিকে চোখ কান খোলা রেখে ব্যবসা করলে খুব দ্রুত
ব্যবসায় উন্নতি করা সম্ভব। গরুর বাচ্চা হওয়ার সেই বাছুর বিক্রি করার জন্য সঠিক
সময় নির্ধারণ করুন। বাজার মূল্যের ওপর নজর রাখুন তারপরে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত
নিন।
ভালো জাত নির্বাচন করুন
পশু পালনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন। ভাল জাত নির্বাচন করতে পারলে খুব
সহজে ব্যবসায় লাভ করতে পারবেন। প্রতিটি বৈশিষ্ট্যের পশুদের নিজস্ব খাদ্যাভাস
রয়েছে। জাতের ওপর নির্ভর করে সুবিধা অসুবিধা যাচাই করা যায় তাই এটি খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। জাতি নির্বাচনে সঠিক পদক্ষেপ দিলে পশুপালন আপনার জন্য লাভজনক হবে।
বাজারে যে জাতের চাহিদা বেশি অবশ্যই জাত নির্বাচনে সেই জাতের প্রাধান্য বেশি
দিবেন।
পশুর সুস্থতার প্রতি খেয়াল রাখুন
পশুর সুস্থতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি অ্যাক্সিডেন্ট আপনার অনেক বড় লসের কারণ
হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই নিয়মিত অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এছাড়াও সিজন্যাল
টিকা দিতে ভুলবেন না। গরুর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভিটামিন ক্যাপসুল এবং
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো অবশ্যই গ্রহণ করবেন। গরুর স্বাস্থ্য যেন সতেজ থাকে
সেদিকে মনোযোগী হবে।
সঠিক ব্যবস্থাপনা
আপনার বাজেট যদি কম থাকে বা অল্প কিছু দিয়ে শুরু করতে চাইলে প্রয়োজনীয়
প্রোডাক্ট সমূহ বাসায় তৈরি করার চেষ্টা করুন। পারে বোঝাতে চাচ্ছি যেগুলো বাসায়
তৈরি করা সম্ভব সেগুলো বাড়িতে তৈরি করার চেষ্টা করুন।যেমন: বাসার আশেপাশে থাকা
জায়গায় ঘাস লাগাতে পারেন। খাবার তৈরি করলে অনেক আওর বা পোঁয়াল এর প্রয়োজন
হয়। তাই নিজেদের জমিতে ধান চাষ করার চেষ্টা করুন।
এতে চালের জোগাড় হবে এবং গরুর খাবারের জোগাড় হয়ে যাবে। আপনার যদি কিছুটা যদি
থাকে তাহলে গম,ভুট্টা কিছুটা পরিমাণে লাগাতে পারেন। এতে বাহিরে থেকে ভুসি কিনতে
হবে না বাড়িতেই তৈরি করতে পারবেন। এখানে বোঝাতে চাচ্ছি প্রয়োজনীয় খাবার গুলো
নিজের জমিতে চাষ করার চেষ্টা করুন এতে খরচের পরিমাণ অনেকটাই কমবে আপনার ইনকাম
সোর্স ও বাড়বে।
কঠোর পরিশ্রম
উন্নতি করতে হলে কঠোর পরিশ্রম অত্যন্ত জরুরী। কোন জাতি আজ পর্যন্ত পরিশ্রম না করে
জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। তাই এ ব্যবসায় আপনার লাভবান হতে চাইলে কঠোর
পরিশ্রম করুন। ব্যবসার শুরুর দিকে সকল কাজ নিজ হাতে করুন এতে অন্য মানুষকে
পারিশ্রমিক দিতে হবে না। প্রথমের দিকে কর্মচারী রাখা থেকে বিরত থাকুন। ধীরে ধীরে
খাবার বড় হলে অথবা আপনার ব্যস্ততা বেড়ে গেলে সে সময় কর্মচারী রাখতে পারেন। তবে
মনে রাখবেন সফল হতে পরিশ্রম করতেই হবে। ধৈর্য ধারণ করুন এবং পরিশ্রম করে এগিয়ে
যান।
আধুনিক পদ্ধতিতে গরুর খাবার
আধুনিক পদ্ধতিতে গরুর খাবার তৈরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সব কাজেই আছে আধুনিকতার
ছোঁয়া। তাই এ যুগে এসে সফল হতে চাইলে আপনাকে আধুনিক ভাবে চিন্তা ভাবনা করতে হবে।
আধুনিকতার প্রথম শর্তই হলো স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ। খাবারের ব্যবস্থাপনা হতে হবে
উন্নত মানের। স্মার্ট ওয়েতে কাজ করতে হবে। তাহলে আপনি দ্রুত সফল হতে
পারবেন।
স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। স্মার্টওয়েতে কাজ করলে কাজ দ্রুত
হবে এবং কাজ করতে তুলনামূলক কম কষ্ট হবে। আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করুন। অল্প
সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন। উন্নত জাতের গরু নির্বাচন করুন। ধৈর্য
সহকারে খামার পরিচালনা করুন সফলতা অবশ্যই পাবেন। পশুর জন্য উন্নত মানের খাবার
নির্বাচন করুন। স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করুন পশু পালনে। আপনার কর্ম আধুনিকতার
ছোঁয়া পেলে সফলতা দ্রুত আসবে।
কম খরচে গরুর খামার
কম খরচে গরুর খামার কিভাবে করা যায়? চলুন আপনাদের সাথে শেয়ার করি কম খরচে গরুর
খামার তৈরির কৌশল। আপনার বাজেট যদি কম হয় তাহলে আপনার কিছু কৌশল অবলম্বন করতে
হবে। সুন্দর পরিকল্পনা করতে হবে খামার তৈরি করতে। অল্প বাজেটে ব্যবসা শুরু করতে
চাইলে আপনার পরিশ্রমই হতে হবে। এছাড়াও কিভাবে ইনকাম বাড়ানো যায় সেদিকে কঠোর
নজর রাখতে হবে। গরুর দুধ বিক্রি, গরুর মাংস বিক্রি, গরুর বাছুর বিক্রি এভাবে
আপনার খামার বড় করতে পারেন।
শুরুতেই বড় ধরনের খামার তৈরি করার পরিকল্পনা না করাই ভালো। ছোটখাটো একটি ঘর তুলে
কাজ শুরু করুন। ধীরে ধীরে উন্নতি করতে পারবেন। যেকোনো কাজে কর্মী না রেখে নিজে
করার চেষ্টা করুন এতে আপনার সফলতা দ্রুত আসবে। পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার দিন। সব সময়
বাজারের খাবারের ওপর নির্ভর না হয়ে জমি থেকে কেটে আনা ঘাস এবং পুকুর থেকে তুলে
আনা কুচুরিপানা খাওয়াতে পারেন। এই ছোট ছোট পদক্ষেপ গুলো কম খরচে গরুর খামার
তৈরিতে সাহায্য করবে।
গরুর খামার প্রশিক্ষণ
গরুর খামার প্রশিক্ষণ সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে ব্লগ পোস্ট সম্পূর্ণ পড়ুন। গরুর
খামার প্রশিক্ষণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থান নির্বাচন ও পরিবহন ব্যবস্থা।
এগুলোতে আপনার মনোযোগ দিতে হবে। গরুর খামার তৈরি করতে চাইলে এ সম্পর্কে আপনার
নূন্যতম জ্ঞান অর্জন করতে হবে। বাসার আশেপাশে যেকোনো অধিদপ্তরে পশুপালন প্রশিক্ষণ
নিতে পারেন।
এছাড়াও আপনি যেখানে বসবাস করেন বা যেখানে গরুর খাবার করতে চাচ্ছেন সেই এলাকাতে
গরুর চাহিদা এবং এই কাজের প্রতিযোগিতা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। গরুর
ভালো-মন্দ সম্পর্কে জানতে হবে। এছাড়াও অবলা এই পশুগুলো আচরণ সম্পর্কে যথেষ্ট
জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এই তথ্যগুলো জেনে পশুপালন খামার তৈরি করা উচিত।
নতুন গরুর খামার
নতুন গরুর খামার তৈরি করতে যেসব জ্ঞান থাকা জরুরী তা হলো: গরুর খাবার সম্পর্কে
আপনার জ্ঞান থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের প্রতি
মনোযোগী হতে হবে। গরুর স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ
প্রদান করতে হবে। এছাড়াও নিরাপত্তার জন্য আপনার ১০০% সতর্ক থাকতে হবে। যেখানে
গরু রাখবেন সে জায়গাটি যেন নিরাপদ হয় তা নিশ্চিত করুন।
গরুর খাবার এবং গরুর সুস্থতার টিকা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করুন। আপনার বিনিয়োগ
সবচাইতে বড় চালিকাশক্তি। তাই নতুন গরুর খামার করতে চাইলে বিনিয়োগের প্রতি
মনোযোগী হন। লিপিবদ্ধ করে হিসাব করুন কত টাকা ইনভেস্ট করবেন এবং মাসে আপনার কত
টাকা লাভ হবে। নতুন খামার করতে চাইলে এ বিষয়গুলো মাথায় রাখা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। বাজার মূল্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করুন।
ছোট গরুর খামার
ছোট গরুর খামার অনেকেই করতে চান। কিন্তু বুঝতে পারছেন না কোথা থেকে শুরু করবেন
অথবা কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছোট্ট একটি খামার উদ্বোধন করতে। আমার ছোট হোক অথবা
বড় আপনাকে এই ব্যবসা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আপনি চাইলে যে কোন অধিদপ্তর
থেকে এ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। হয়তো বা আপনার বিনিয়োগ বা বাজেট কম জন্য
ছোট গরুর খামার করতে চাচ্ছেন।
আমার ছোট হোক কিংবা বড় এই নূনতম জ্ঞানগুলো আপনার মধ্যে থাকতেই হবে। যেমন: গরুর
বাসস্থান, গরুর খাবার, গরুর নিরাপত্তা, গরুর সুস্থতা এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ।
আপনার বাজেট কম হলে গরুর দুধ, গোবর থেকে তৈরি পাউস বা ঘুটে, গরুর মাংস এই
বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগী হয়ে আপনার ব্যবসা বাড়াতে পারেন। ধৈর্য রেখে পরিশ্রম
করতে হবে। যেহেতু ছোট খামার করতে চান তাই পরিশ্রমটা একটু বেশি করতে হবে। গরুর
স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগী হন এবং ভাল জাত নির্বাচন করুন।
একটি গরুর জন্য কত ফুট জায়গা লাগে
একটি গরুর জন্য কত ফুট জায়গা লাগে? এমন প্রশ্ন আপনারা অনেকেই করে থাকেন। সাধারণত
যাদের বাজেট কম এবং জায়গা স্বল্পতায় ভুগছেন তাদের মনে এই প্রশ্নটি বেশি আসে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক: একটি গরুর জন্য ৮ থেকে ১০ ফুট জায়গা দিতে হবে। তবে যদি
অতিরিক্ত জায়গার সমস্যা হয় তাহলে ৬ থেকে ৭ ফুট জায়গাতেও একটি গরু পালন করতে
পারবেন।
তবে একটি গরু পালন করার জন্য ন্যূনতম ৮ ফুট জায়গা রাখা সবচাইতে ভালো। এর চাইতেও
কম জায়গা হলে একটু অসুবিধা হয়। গরুর সামনে খাবার দেওয়ার জন্য ২ ফুট জায়গা
রাখতে হয়। আর পেছনে আবর্জনা যাওয়ার জায়গা হিসাবে ০.৫ ফুট জায়গা রাখতে হবে।
এইসব মিলিয়ে একটি গরু পালন করতে ১০ ফুট জায়গা দরকার। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
গরুর খাবার
গরুর খামার তৈরি করার আগে গরুর খাবার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। সবার আগে
ভালো জাতের গরু নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এরপর উপযুক্ত খাবার খাওয়ানোর
মাধ্যমে গরুর স্বাস্থ্য ভালো করতে হবে। এর ফলে উচ্চ মূল্যে বাজারে গরু বিক্রি
করতে পারবেন। গরুর স্বাস্থ্য ভালো করতে অথবা বোটা জাত করার করতে সুষম খাদ্য দিতে
হবে। চলুন দেখে নিই সুষম খাদ্য সমূহ।
পরিমান মতো কাঁচা ঘাস ও পয়াল বা আয়োর খাওয়াতে হবে। খাবারের লিস্টে দানাদার
খাবার রাখতে হবে। যেমন: ভুট্টা, গম, চালের গুড়া, খেসারি ডাল, তিল, বাদামের খৈল
ইত্যাদি। যথেষ্ট পরিবারে পরিষ্কার পানি খাওয়াতে হবে।। পানির স্বাদ বৃদ্ধি করতে
লবণ মিশ্রণ করতে পারেন। ইউরিয়া মিশ্রিত খর খাওয়াতে হবে। এছাড়াও বাজার থেকে
ভুসি দিয়ে এসে খাওয়াতে পারেন। চাইলে এই ভুসি বাসায় ও তৈরি করতে পারেন। পরিমান
মতো এই খাবারগুলো রেগুলার খাওয়াতে হবে তবেই গরু স্বাস্থ্যকর হবে।
গরুর পরিচর্যা
গরুর পরিচর্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গরুর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গরুর পরিচর্যা
করতে হবে। নিয়মিত খাবার খাওয়ালেই গরুর স্বাস্থ্য ভালো থাকে না। খাবার খাওয়ানোর
পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। নিয়মিত টিকা দিয়ে দিতে হবে। গরুর
রুচি কমে গেলে রুচির ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে।তিন মাস পর পর কৃমির ঔষধ খাওয়াতে
হবে।
গরুর বাসস্থান বা খাবার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। গরুকে মশা মাছি বিরক্ত
করছে কিনা সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়াও গরুর অস্বাভাবিক কিছু দেখলে
ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। নিয়মিত গরুর গা পরিষ্কার করে দিতে হবে। পরিষ্কার
পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন থাকতে হবে। গরুর খাবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত
করতে হবে। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে গরুর পরিচর্যা সম্পূর্ণ করতে হবে।
শেষ কথাঃ গরুর খামার পরিকল্পনা
গরুর খামার পরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আজকের ব্লগ পোস্টে। গরুর
খামার সম্পর্কে সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করছি কিছুটা হলেও
উপকৃত হবেন আজকের পোস্ট থেকে। একটি গরুর খাবার দাঁড় করাতে প্রয়োজনীয় সকল
পদক্ষেপ দিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এছাড়াও আলোচনা করেছি আধুনিক পদ্ধতিতে
গরুর খামার তৈরি সম্পর্কে।
আপনারা গরুর খামার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে এই বিষয়গুলো অবশ্যই মাথায় রাখবেন।
একটা ব্যবসা দাঁড় করাতে হলে সুন্দর একটি গুছানো পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গরুর খামার সম্পর্কিত সকল তথ্য তুলে ধরেছি। এছাড়াও কম খরচে গরুর খামার কিভাবে
করবেন তা নিয়েও আলোচনা করেছি। আজকের ব্লগ পোস্ট ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করে
জানাবেন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।
ডেইলি ডাইরির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url