বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয় কি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আমাদের অনেকের কাছেই অজানা বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। আজকের ব্লগে এটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

বাচ্চাদের-দাঁত-ওঠার-সময়-করণীয়
এছাড়াও আজকের পোস্টে জানতে পারবেন বাচ্চার দাঁত ওঠার সঠিক সময় এবং দাঁত না ওঠার কারণ সম্পর্কে। দাঁত ওঠার সময় কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা থাকছে। সম্পূর্ণ জানতে সাথে থাকুন। 

পেইজ সূচিপত্রঃ বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয় 

বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয় 

বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। অনেক মায়েরা এ বিষয় নিয়ে কিছুটা চিন্তায় থাকেন। ছোট্ট একটি বাচ্চার মুখে যখন প্রথম দাঁত আসে দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। এবং বাচ্চার মধ্যে কিছুটা পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যায়। বাচ্চাদের কামড় দেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। বাচ্চাদের সাধারণত ১০ থেকে ১২ মাসের মধ্যে দুধের দাঁত ওঠে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও হতে পারে। 

অনেক বাচ্চারা দাঁত ওঠার সময় অসুস্থ হয়ে যায়। এ সময় বাচ্চাদের একটু বেশি খেয়াল রাখা উচিত। যেসব বাচ্চা বেশি দুর্বল তাদের আরো বেশি সমস্যা হতে দেখা যায়। দাঁত উঠার সময় বাচ্চার মধ্যে কিছুটা বিরক্ত ভাব লক্ষ্য করা যায়। অনেক সময় বাচ্চারা এই সময় তেমন খেতে চায় না। চলুন জেনে নেওয়া যাক বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয় কি কিঃ

  • ব্যথা হয়ঃ অনেক বাচ্চার দাঁত ওঠার সময় মাড়িতে ব্যথা হয়। তারা তা বলতে পারেনা অনেক কান্নাকাটি করে। এ সময় গায়ের জ্বর আসতেও দেখা যায়। তাই পরিস্থিতি খারাপ হলে দ্রুত ডাক্তার দেখানো উচিত। 
  • জ্বর আসাঃ ব্যথার কারণে অল্প থেকে তীব্র জ্বর আসতে পারে। ৬ থেকে ১০ মাসের শিশুর কোনো কারণ ছাড়াই জ্বর আসলে বুঝতে হবে দাঁত ওঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জ্বর এমনিতেই ভাল হয়ে গেলে ঔষধ খাওয়ানোর দরকার নেই যদি অস্বাভাবিক জ্বর আসে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধ খাওয়াবেন। 
  • বমি হওয়াঃ অনেক বাচ্চার এ সময় বমির প্রবণতা দেখা দেয়। এ সমস্যা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। গ্যাস জাতীয় কোন খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকবেন।
  • লালা বৃদ্ধিঃ দাঁত ওঠার লক্ষণ হিসেবে কাজ করে অতিরিক্ত লালা। কোন কারণ ছাড়াই যদি বাচ্চার লালার পরিমাণ বেড়ে যায় তবে বুঝে নেবেন দাঁত ওঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। সে সময় পাতলা কাপড় অথবা টিস্যু দিয়ে বাচ্চার মুখ পরিষ্কার করে দিতে পারেন। 
  • আচরণের পরিবর্তনঃ অনেক শিশুর আচরণের পরিবর্তন দেখা যায়। খিটমিটে স্বভাবের হয়ে যায়। তাই বাচ্চার যত্ন নিন। 
  • অরুচিঃ এ সময় বাচ্চারা তেমন খেতে চায় না। ফলে দুর্বল হয়ে যায়। মাড়িতে ব্যথা হওয়ার কারণে শক্ত জিনিস মুখে নিতে চায় না। তাই বাচ্চাকে ঘুরে ঘুরে নরম খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। 
  • পেটের সমস্যাঃ পেটের সমস্যা বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। দাঁত ওঠার সময় এগুলো স্বাভাবিক একটি বিষয়। তবে মাদ্রাসা ছাড়িয়ে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। 
  • পাতলা পায়খানাঃ অনেক বাচ্চার পাতলা পায়খানা হতে দেখা যায়। পাতলা পায়খানা যদি দুই একবার হয়ে ঠিক হয়ে যায় তবে চিন্তার কিছু নেই। আর যদি অতিরিক্ত পরিমাণে এই সমস্যা দেখা দেয় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। কারণ অতিরিক্ত পাতলা পায়খানা হলে শরীরে পানির পরিমাণ কমে যাবে এবং শরীর দুর্বল হয়ে যাবে। 
  • কামড় দেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়ঃ এ সময় বাচ্চাদের কামড় দেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। যখন দেখবেন বাচ্চা মাড়ি দিয়ে কামড় দেওয়ার চেষ্টা করছে তখন বুঝে নেবেন বাচ্চাটির দাঁত ওঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে দাত উঠে যাবে। সে সময় বাচ্চার ভালোভাবে খেয়াল রাখবেন।
  • কামড় প্রতিরোধঃ মাত্রা অতিরিক্ত কামড় দিলে বা এটি যদি আপনার সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে উপযুক্ত খেলনা দিতে পারেন। বাচ্চাদের কামড়ানোর খেলনা পাওয়া যায়। সেগুলো ব্যবহার করবেন এতে আপনার সমস্যার সমাধান হবে এবং বাচ্চারও কোন ক্ষতি হবে না। তবে সাধারন কোন প্লাস্টিকের জিনিস যেন মুখে না দেয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। 
  • ঠান্ডা বরফের স্যাকঃ বাচ্চার দাঁত ওঠার সময় অতিরিক্ত ব্যথা হলে কান্নাকাটির করবো। সে সময় বাচ্চাকে সাময়িক আরাম দেওয়ার জন্য ঠান্ডা বরফে একটি কাপড় চাপ দিয়ে তারপরে দাঁতে স্যাক দিতে পারেন। এতে বাচ্চা কিছুটা আরাম পাবে।
  • মিষ্টান্ন থেকে বিরত রাখুনঃ নতুন দাঁত ওঠার সময় মিষ্টি জাতীয় খাবার থেকে দূরে রাখুন। অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে মাত্রাতিরিক্ত মিষ্টি একবারে দেওয়া উচিত নয়। তবে বারে বারে একটু একটু করে দিতে পারেন। 
  • দাঁত ক্ষয়ঃ এমন ধরনের খাবার বা খেলনা থেকে বিরত রাখবেন যেগুলো মুখে দেওয়ার কারণে দাঁত ক্ষয় হয়ে যেতে পারে।

এই বিষয়গুলো বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। সাধারণত বাচ্চাদের প্রথমে নিচের দাঁত ওঠে তারপরে উপরের দাঁত ওঠে। তবে এর ব্যতিক্রমও হতে পারে। অনেকের প্রথমে উপরের দাঁত ওঠে। কিছু বাচ্চার দাঁত উঠতে অনেক দেরি হয়। আবার কিছু বাচ্চার তাড়াতাড়ি দাঁত উঠে যায়। যেসব বাচ্চার একটু পুষ্টির অভাব আছে তারা দাঁত ওঠার সময় কিছুটা অসুস্থ হয়ে যায়। তাই বাচ্চাদের ছয় মাসের পর একটু বাড়তি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। 

বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সঠিক সময় 

বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সঠিক সময় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। অনেকেই জানতে চেয়েছেন বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সঠিক সময় সম্পর্কে। মনে রাখবেন সব বাচ্চাদের একই সময় দাঁত ওঠা শুরু হয় না। কিছু বাচ্চার আগে দাঁত ওঠে আবার কিছু বাচ্চার দাঁত উঠতে সময় লাগে কিছুটা। আবার এমনটাও দেখা গিয়েছে বাচ্চা হওয়ার সময় মুখে দাঁত নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে।

তাই নির্দিষ্ট সময়ের আগে অথবা পরে দাঁত উঠতে পারে এটি কোন চিন্তার কারণ নয়।। সাধারণত বাচ্চাদের তিন মাস থেকে দাঁত ওঠা শুরু হয় এবং তা প্রায় তিন বছর পর্যন্ত চলতে পারে। তবে বেশিরভাগ সময় ছয় মাস থেকে ১০ মাসের মধ্যে দাঁত ওঠা কমপ্লিট হয়ে যায়। এর ব্যতিক্রম হতেও দেখা যায়। এক বছর থেকে তিন বছরও লাগতে পারে সম্পূর্ণ দাঁত ওঠা কমপ্লিট হতে। 

বাচ্চাদের দাঁত ওঠার লক্ষণ 

বাচ্চাদের দাঁত উঠার লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। বাচ্চাদের দাঁত ওঠার আগে কিছু লক্ষণ খেয়াল করা যায়। ৬ থেকে ১ বছরের বাচ্চার মধ্যে এ সকল লক্ষণ দেখা গেলে বুঝতে হবে দাঁত ওঠার প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। তাই এ সময় বাচ্চার একটু ভালোভাবে যত্ন নিন। এ সময় বাচ্চা স্বাভাবিক ভাবেই একটু অসুস্থ হয়ে যায়। অতিরিক্ত চিন্তার কিছু নেই। তবে অতিরিক্ত অসুস্থতা দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

আরো পড়ুনঃ সিস্ট হওয়ার লক্ষণ কি কি

লক্ষণগুলোঃ

  • লালা বেশি ঝরতে পারে। 
  • বাচ্চার দাঁতের মাড়ি ব্যথা হতে পারে। 
  • অল্প বা বেশি জ্বর আসতে পারে। 
  • অনেক সময় বাচ্চা বমি করতে পারে। 
  • পাতলা পায়খানার সমস্যা দেখা দিতে পারে। 
  • হজমে গোলমাল দেখা দিতে পারে। 
  • বাচ্চার মেজাজ কিছুটা খিটখিটে হয়ে যেতে পারে।
  • ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। 
  • খাওয়ার প্রতি অনীহা আসতে পারে। 
  • অনেক সময় মারি ফুলে যেতেও দেখা যায়। 
  • এ সময় বাচ্চারা একটু বেশি কান্নাকাটি করে। 
  • অনেক বাচ্চারা নিদ্রাহীনতায় ভুগে। 
  • এ সময় বাচ্চার কামড়ানোর প্রবণতা বেড়ে যায়।

বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় কি পায়খানার সমস্যা হয় 

বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় কি পায়খানার সমস্যা হয়? তা অনেকেই জানতে চেয়েছেন। বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় কিছুটা পেটের সমস্যা হয়। এছাড়াও এই সময় পাতলা পায়খানাও হতে পারে। এ সময় হজমে একটু গোলমাল হয়। বাচ্চারা তেমন কিছু খেতে চায় না মাড়িতে ব্যাথা থাকার কারণে। তাই বাচ্চাদের দাঁত উঠার সময় পায়খানার সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

এতে অতিরিক্ত চিন্তা করার কিছু নেই। দুই একবার পাতলা পায়খানা হওয়ার পর এমনি ঠিক হয়ে যাবে। তবে যদি ঠিক না হয় বা অস্বাভাবিক ভাবে পাতলা পায়খানা হয় তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। অতিরিক্ত পাতলা পায়খানার কারণে বাচ্চার শরীরে পানির শূন্যতা দেখা দিতে পারে। তা থেকে বড় সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। অবশ্যই অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।। 

বাচ্চার দাঁত ওঠার সময় কি বমি হয় 

বাচ্চার দাঁত ওঠার সময় কি বমি হয়? এটি আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন। বাচ্চাদের দাঁত উঠার সময় কিছুটা পেটের সমস্যা দেখা দেওয়ার কারণে বমি ও হতে পারে। যেসব বাচ্চা একটু বেশি দুর্বল তাদের এমন কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। এ সময় বাচ্চার দাঁতে ব্যাথা থাকে তাই শক্ত কোন খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন। সুজি বা এ ধরনের খাবার বাচ্চাকে ঘুরে ঘুরে খাওয়ার চেষ্টা করুন।

বাচ্চাদের-দাঁত-ওঠার-সময়-করণীয়
দাঁত ওঠার সময় বমি হওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে মাত্র অতিরিক্ত বমির লক্ষণ দেখা গেলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। অনেক সময় এটি বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই বাচ্চার এ সময় ভালোভাবে খেয়াল রাখুন। ৬ মাস পর থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি একটু স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। এতে বড় সমস্যা এড়ানো সম্ভব হবে। 

বাচ্চার দাঁত ওঠার সময় কি জ্বর আসতে পারে 

বাচ্চার দাঁত ওঠার সময় কি জ্বর আসতে পারে? অনেকে জানতে চেয়েছেন বাচ্চার দাঁত উঠার সময় জ্বর আসতে পারে কিনা। দাঁত উঠার সময় জ্বর আসা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। হালকা জ্বর আসলে এতে চিন্তার কিছু নেই। কোন কারণ ছাড়াই যদি বাচ্চার গায়ে হালকা জট আসে তাহলে বুঝবেন বাচ্চার দাঁত ওঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। 

আরো পড়ুনঃ কিভাবে পেটের চর্বি কমানো যায় তার গোপন টিপস

এতটা সময় বাচ্চার মাড়িতে ব্যথা থাকে। এই ব্যথা থেকে গায়ে হালকা জ্বর আসতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শে অল্প পাওয়ারের একটি সিরাপ খাওয়াতে পারেন। ব্যথা থেকে বাচ্চাকে একটু আরাম দিতে বরফের ওপর একটি পরিষ্কার কাপড় চেপে রেখে বাচ্চার মাড়িতে হালকা স্যাক দিতে পারেন। এতে বাচ্চা কিছুটা আরাম পাবে। দাঁত উঠার সময় জ্বর আসলে চিন্তার কিছু নেই। ডাক্তারের পরামর্শে সিরাপ খাওয়ার মাধ্যমে বাচ্চা দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।

বাচ্চার দাঁত না ওঠার কারণ বা দেরিতে ওঠার কারণ 

বাচ্চার দাঁত না ওঠার কারণ বা দেরিতে ওঠার কারণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। অনেক বাচ্চাদের দাঁত উঠতে একটু দেরি হয় আবার অনেক বাচ্চার খুব দ্রুতই দাদ উঠে যায়। গ্রামের কিছু বয়স্ক মানুষ মনে করে যেসব বাচ্চা আর বুদ্ধি বেশি, তাদের তাড়াতাড়ি দাঁত ওঠে। আর দেরিতে দাঁত উঠলে তাদের বুদ্ধি সাধারনত কম হয়। কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। 

দাঁত ওঠার সাথে বুদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই। তবে যে বাচ্চা শারীরিকভাবে একটু দুর্বল অনেক ক্ষেত্রে সেসব বাচ্চা দাঁত উঠতে একটু দেরি হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় ছয় থেকে দেড় বছরের মধ্যে দাঁত উঠা কমপ্লিট হয়ে যায়। তবে তারও বেশি সময় লাগলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চলুন দেখে নেওয়া যাক বাচ্চার দাঁত দেরিতে ওঠার কারণ সমূহঃ

  • বংশগতিও ভাবেঃ বাবা মায়ের যদি দাঁত দেরিতে ওঠার ইতিহাস থাকে তাহলে বাচ্চার দাঁতও দেরিতে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি সাধারণ একটি প্রক্রিয়া চিন্তার কিছু নেই। 
  • কম ওজনঃ যেসব বাচ্চার জন্মের সময় ওজন কম থাকে সেসব বাচ্চার দাঁত দেরিতে উঠতে দেখা যায়।
  • সময়ের আগে জন্মগ্রহণঃ সাধারণত বাচ্চা ৩৬ সপ্তাহ পেটে থাকার পর দুনিয়ার আলো দেখে। তবে কোন কারণে এই ৩৬ সপ্তাহ সম্পূর্ণ না হতেই যদি জন্মগ্রহণ করে তাহলে সেসব বাচ্চার দাঁত উঠতে একটু দেরি হয়।
  • পুষ্টির অভাবঃ অনেক বাচ্চার শরীরে পুষ্টির অভাব থাকে তাই দাঁত দেরিতে ওঠে। ৬ মাস পর থেকে বুকের দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি বাড়তি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস তৈরি করুন। 
  • ক্যালসিয়ামঃ বাচ্চার শরীরে ক্যালসিয়াম এর পরিমাণ কম থাকলে দাঁত দেরিতে উঠে। তাই বাচ্চাকে পেট ভরে বুকের দুধ খাওয়ান। 
  • ফসফরাসঃ ফসফরাসের অভাব দেখা দিলেও দাঁত উঠতে দেরি হয়। 
  • ভিটামিন-ডিঃ দাঁত ওঠার জন্য ভিটামিন-ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন-ডি এর অভাব হলে দাঁত উঠতে দেরি হতে পারে। বাচ্চা শীতকালে জন্মগ্রহণ করলে নিয়মিত হালকা সূর্যের আলো চোখে ফেলুন। এতে ভিটামিন-ডি এর অভাব পূরণ হবে। 
  • ভিটামিন-সিঃ ভিটামিন-সি এর অভাব থাকলে দাঁত উঠতে দেরি হতে পারে। তাই ছয় মাস পর থেকে বুকের দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি পুষ্টিকর ফল খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।
  • স্তনের দুধঃ অনেক মায়েরা বাচ্চাকে সময়মতো বুকের দুধ খাওয়াতে চান না। এতে বাচ্চা শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই বাচ্চাকে সময়মতো বুকের দুধ পান করান। চিকিৎসকরা বলে থাকেন বাচ্চাকে কখনোই বুকের দুধের অভাব দেওয়া উচিত নয়।
  • পিটুইটারি গ্রন্থিঃ পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে হরমোন নিঃসরণের অভাব দেখা দিলে বা দেরিতে নিঃসরণ হলে দাঁত উঠতে দেরি হয়। 
  • থাইরয়েড গ্রন্থিঃ থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে হরমোন নিঃসরণের অভাব দেখা দিলে বা দেরিতে হরমোন নিঃসরণ হলে দাঁত উঠতে দেরি হয়ে থাকে। 
  • ডাউন সিনড্রোমঃ যেসব বাচ্চারা ডাউন সিনড্রোম রোগে আক্রান্ত সেসব বাচ্চাদের দাঁত উঠতে দেরি হয়। 

এছাড়াও হরমোন জনিত বা শারীরিক সমস্যার কারণেও দেরিতে দাঁত উঠতে পারে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরেও যদি দাঁত না ওঠে অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কারণ দাঁত দেরিতে উঠলে কিছু জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। তাই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। সঠিক সময় দাঁত উঠলে এই জটিলতার সম্মুখীন আর হতে হবে না।

দেরিতে দাঁত উঠলে কি ধরনের সমস্যা হতে পারে 

দেরিতে দাঁত উঠলে কি ধরনের সমস্যা হতে পারে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো এই পোস্টে। দেরিতে দাঁত ওঠা একটি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। দাঁত উঠতে অনেক বেশি দেরি হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। দাঁত উঠতে দেরি হওয়া যদি বংশগতিও হয়ে থাকে তবে কোন সমস্যা নেই। চলুন দেখে নেওয়া যাক তার দেরিতে উঠলে কেমন জটিলতায় পড়তে হয়।

বাচ্চাদের-দাঁত-ওঠার-সময়-করণীয়
যেমনঃ

  • দাঁত উঠতে দেরি হলে শিশুর পুষ্টি ঘাটতি দেখা দেয় অর্থাৎ অপুষ্টিতে ভোগে। 
  • বয়স অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে না দাঁত না থাকার কারণে তাই পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। 
  • শিশুর ইমিউনিটি হ্রাস পায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় না পুষ্টিকর খাবার খেতে না পারার কারণে।
  • শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি বাধা গ্রস্ত হয়। 
  • দেরিতে দাঁত উঠলে শিশুর স্থায়ী দাঁতগুলো আঁকাবাঁকা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। 
  • এতে শিশুর মুখের সৌন্দর্য হ্রাস পায়। 
  • দাঁত আঁকাবাঁকা হলে অনেক সময় খাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। খাবার চিবাতে অসুবিধা হয়। 
  • দাঁত দেরিতে উঠলে খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তবে বাচ্চার পুষ্টির শূন্যতা পূরণ করতে উপযোগী খাবার দিতে হবে। 
  • নরম নিয়মিত নরম খাবার খাওয়ান। 
  • যদি হরমোন জনিত সমস্যা হয় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 
  • বাচ্চাকে ভিটামিন সম্পন্ন খাবার দিন। 
  • ভিটামিন-সি ভিটামিন-ডি ক্যালসিয়াম ফসফরাস এর চাহিদা পূরণ করে এমন খাবার নির্বাচন করুন।

বাচ্চার দুধ দাঁতের সংখ্যা কতটি 

বাচ্চার দুধ দাঁতের সংখ্যা কতটি তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আপনারা অনেকেই জানতে চান আসলে বাচ্চার দুধ দাঁত কয়টি ওঠে। এটি নিয়ে আপনারা অনেকেই কনফিউসড। আজকের পোস্টে আপনাদের সঠিক তথ্য জানাবো। চলুন জেনে নেওয়া যাক বাচ্চার দুধ দাঁতের সংখ্যা। বাচ্চার দুধ দাঁত মোট ২০ টি। সাধারণত বাচ্চার ২০ টি দাঁত ওঠে তবে কোন হরমোনাল সমস্যার কারণে এর ব্যতিক্রম হতে পারে। 

আরো পড়ুনঃ শরীরে রক্ত বৃদ্ধি করার দশটি কার্যকারী উপায়

বাচ্চাদের দাঁত

উপরের সারিতে দাঁতের সংখ্যাঃ

  • কর্তন দাঁত ৪ টি
  • ছেদন দাঁত ২ টি
  • পেষণ দাঁত ৪ টি
  • অগ্রপেষণ দাঁত ০টি

নিচের সারিতে দাঁতের সংখ্যাঃ

  • কর্তন দাঁত ৪ টি
  • ছেদন দাঁত ২ টি
  • পেষণ দাঁত ৪ টি
  • অগ্রপেষণ দাঁত ০ টি

প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দাঁত

উপরের সারিতে দাঁতের সংখ্যাঃ

  • কর্তন দাঁত ৪ টি 
  • ছেদন দাঁত ২ টি
  • পেষণ দাঁত ৬ টি
  • অগ্রপেষণ দাঁত ৪ টি

নিচের সারিতে দাঁতের সংখ্যাঃ

  • কর্তন দাঁত চারটি ৪ টি 
  • ছেদন দাঁত ২ টি
  • পেষণ দাঁত ৬ টি
  • অগ্রপেষণ দাঁত ৪ টি

সর্বশেষঃ বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয় 

বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি বুঝতে পেরেছেন বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। বাচ্চাদের দাঁত উঠতে কিছুটা দেরি হলে খুব বেশি উত্তেজিত হওয়ার দরকার নেই। তবে যদি দেখেন পরিস্থিতি হাতের বাহিরে চলে যাচ্ছে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। 

বাচ্চার সুস্থতা আমাদের কাছে প্রধান প্রায়োরিটি। তাই বাচ্চাকে ছয় মাস পর থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়ান। তাহলে বাচ্চার শারীরিক গঠন এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো হবে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে বাচ্চা সুস্থ স্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। পোস্টটি পড়ে কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন আশা করি কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছেন। ধন্যবাদ।

 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডেইলি ডাইরির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url