মিল্ক শেক এর উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে
মিল্ক শেক আমাদের সবার কাছে একটা জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু খাবার। মিল্ক শেক নিয়ে আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন।আজকের ব্লগে আপনাদের জানাবো মিল্কশেকের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে। আপনাদের সামনে তুলে ধরবো মিল্কশেকের ভালো দিক এবং ক্ষতিকর দিক সমূহ।
মিল্কশেক খুবই পুষ্টি গুন সম্পন্য একটি খবার।এই খাবার তরুন প্রজন্মের পছন্দের তালিকার বড় একটা অংশ জুড়ে আছে।তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য, আমাদের স্বাস্থ ঝুঁকিতে পরতে হচ্ছে।তাই আপনার ডায়েট চার্টে মিল্ক শেক রাখার আগে মিল্ক শেকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন।
পেজ সূচিপত্রঃমিল্ক শেক এর উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে
মিল্ক শেক কী?
মিল্ক শেক হলো দুধ, বরফ,আইসক্রিম,চিনি এবং বিভিন্ন ফল(খেজুর,
কলা,আপেল,স্ট্রবেরি, আম,আঙ্গুর,কাঁঠাল) দিয়ে তৈরি একটি সুস্বাদু আর পুষ্টি গুন
সম্পন্য ফেনাযুক্ত পানীয়। এটি চাইলে আপনি বাড়িতে বানিয়ে খেতে পারবেন।বাজারে
মিল্ক শেক পাউডার কিনতে পাওয়া যায়।
মিল্ক শেকের মধ্যে দুধ এবং উপকারী ফলের মিশ্রণ থাকে।এখানে প্রচুর পরিমানে
কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ ইত্যাদির সংমিশ্রণ থাকে।এই সুস্বাদু ও
পুষ্টিকর উপকরণ গুলো মিশ্রনে যে পানীয় তৈরি হয় তাকে মিল্ক শেক বলে।
মিল্ক শেক খেলে কি হয়?
মিল্কশেক খুবই উপকারী একটি খাবার পানীয়। এটি ইমিউনিটি বৃদ্ধিকরে।বাড়ন্ত
বাচ্চা এবং তরুনদের জন্য খুব উপকারী। পরিমাণ মতো সকল উপকরণ ব্যবহার করে বয়স্করা
ও খেতে পারেন।সকল ধরনের পুষ্টিগুন থাকার কারনে এটা আপনার শরীর কে রাখবে
ত্বরতাজা।
এটি আপনার দেহের ক্ষয় পূরন করতে সাহায্য করবে কারন এতে আছে প্রোটিন। এতো
উপকারী উপাদান থাকার কারনে মিল্কসেশ পান করার পর আপনার পেট ভরা অনুভূতি থাকবে
বেশ কিছুক্ষন।
মিল্কশেক এর উপকারিতা কি কি?মিল্ক খেয়ে কি ওজন বাড়ানো যায়?
মিল্কশেক নানান রকম ফল এবং দুধ দিয়ে তৈরি।আর আর এগুলো আমাদের মানব দেহের জন্য
খুবই উপকারী। মিল্কশেক নিয়মিত খাওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের পরিবর্তন লক্ষ্য করতে
পারবো।চলুন আর কথা না বাড়িয়ে মিল্ক শেক এর উপকারিতা সম্পর্কে যেনে নিইঃ
- মিল্কশেক হাড় গঠনে সাহায্য করে।কারন মিল্কশেকে আছে দুধ।আর দুধে থাকে ক্যালসিয়াম যা হাড় এর জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। হাড় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই বাড়তি বয়সী বাচ্চাদের জন্য মিল্কশেক খুবই উপকারি। চিনির পরিমান ঠিক রেখে বয়স্ক মানুষ ও খেতে পারে।
- মস্তিষ্ক গঠনের খুব উপকারী মিল্কশেক। মিল্কশেকে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মস্তিষ্কের ফ্রি মেডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
- হার্টের রুগীদের জন্য মিল্কশেক খুবই উপকারি খাবার।তবে ডায়াবেটিস থাকলে খাওয়া যাবে না।হার্টের রুগীকে ডাক্তার শক্ত খাবার খেতে নিষেদ করে যেন হার্টে কোনো রকম চাপ না পরে।তাই সেই সব রুগী দের জন্য মিল্কশেক পারফেক্ট একটা খাবার পানীয়
- মিল্কশেক দেহের জন্য পারফেক্ট পানীয়। এতে অনেক উপকরণ রয়েছে যা আমাদের ইমিউনিটি বাড়ায়। মিল্কশেকে রয়েছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট,খনিজ,ভিটামিন, চর্বি ইত্যাদি। আর এগুলো সকল উপাদান আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয়।
- মিল্কশেক নিয়মিত খাওয়ার মাধ্যমে যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়। যৌন শক্তি বাড়ানোর জন্য খেজুর বা চকলেটের মিল্কশেক খেতে পারেন।মিল্কশেক এর পাশাপাশি কাঁচা রসুন খেতে পারেন এটা খুব ভালো কাজ দেয়।
- আপনার যারা মোটা হওয়ার জন্য নানা রকম টিপস অবলম্বন করতে করতে ক্লান্ত। তারা মিল্ক শেক ট্রাই করতে পারেন। নিয়মিত মিল্কশেক খাওয়ায় আপনার ওজন বাড়বে ১০০%।আপনি হতাশ হবেন না।মিল্কশেক খাওয়ার পাশাপাশি জিম কিরেন খুব তারাতারি ফলাফল পাবেন।
- মিল্কশেক আপনার ত্বক সুন্দর রাখবে। কারন মিল্কশেকে অনেক ধরনের ফল থাকে যা ত্বকের জন্য উপকারী। ফলে ফাইবার থাকে প্রচুর পরিমান এবং ভিটামিন -সি যুক্ত ফল স্কিনের জন্য খুব ভালো।
- নিজেকে ফিট রাখতে মিল্কশেক এর পাশাপাশি পরিমিত ব্যায়াম করুন।
- নিজেকে ভিতর থেকে অনেক স্ট্রং ফিল করবেন
- স্বাস্থ ভালো থাকলে মন টা অ ভালো থাকবে।
- চিনির পরিমান ঠিক রাখতে হবে।পরিমিত চিনি স্বাস্থের জন্য ভালো। শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখে।
মিল্কশেক এর পুষ্টিগুন গুলো কি কি?
মিল্কশেকে সব ধরনের পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। প্রয়োজনীয় সকল উপাদান রয়েছে
মিল্কশেকে যা আমাদের দেহের জন্য অত্যাবশকীয়।আমাদের দৈনন্দন জীবন আমারা বিভিন্ন
কাজের মধ্যে দিয়ে পার করি।সারাদিনের ব্যস্ততায় বা খাটাখাটনি মধ্যে আমাদের
অনেক ক্যালরি খরচ হয়ে যায়।সেই ঘাটতি টুকু পূরন করার জন্য মিল্কশেক পারফেক্ট
প্রোডাক্ট।চলুন দেখে নি মিল্কশেক এর উপাদান গুলো কি কি।
প্রতি ১০০০ গ্রাম মিল্কশেকে যে পরিমান পুষ্টি উপাদান থাকেঃ
- সোডিয়াম (Na)-৯৫০মিলিগ্রাম
- পটাসিয়াম (K) - ১৮৩০মিলিগ্রাম
- কোলেস্টেরল (kolesterol)-১২০মিলিগ্রাম
- ক্যালরি(calorie)-১১১০.৯০গ্রাম
- শর্করা (carbohydrate) -১৮০গ্রাম
- ফ্যাট(fat)-১৯গ্রাম
- প্রোটিন (protein) -৩৯গ্রাম
- সুগার(sugar)-১৮০গ্রাম
- ক্যালসিয়াম (Ca)-১৪%
- ম্যগনেসিয়াম(Mg)-৩%
- ভিটামিন ডি(vitamin-D)-১২%
মিল্কশেক এর অপকারিতা বা পাশ্বপ্রতিক্রিয়া
একটা মুদ্রা বা কাচিপয়সার যেমন এপিঠ ওপিঠ দুই পিঠ আছে তেমন সকল জিনিসের ভালো
খারাপ দুই দিক আছে।মাত্রাতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না।সব কিছুরই একটা নিদিষ্ট
নিয়ম আছে।আমাদের আসেপাশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে যারা অতিরিক্ত লাভের
আসার খারাপ এবং ক্ষতি কর প্রডাক্ট সেল করে।যেটাতে কোনো কিছুই ঠিক পরিমাণে থাকে
না যার কারনে পাশ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
এই জন্য বাসায় বানানো মিল্কশেক অনেক বেশি স্বাস্থসম্মত হয়। তবে আপনি
একটু যাচাই বাচাই করে নিতে পারে বাজার থেকে।এবং সঠিক পরিমান ব্যবহার করে খেতে
পারেন।চলুন এবার কিছু অপকারিতা আলোচনা করিঃ
- এলার্জির প্রবলেম দেখা দিতে পারে।মিল্কশেকে মিশ্রিত কোনো প্রোডাক্ট এ যদি আপনার এলার্জি থাকে থাকে তাহলে মিল্কশেক খাওয়ার পর আপনার সমস্যা হবে।তাই এলার্জি আছে এমন কেউ যদি থাকেন এটা থেকে দূরে থাকেন।
- যাদের হজম শক্তি একটু কম তাদের হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- সুস্বাস্থ আমরা সবাই চাই। কিন্তু মিল্কশেকে অনেক পুষ্টি উপাদানে ভরপুর।তাই আপনার অজন অনেক বেড়ে যেতে পারে তাই।নিয়ম ফলো করেন।
- মিল্কশেক খাওয়া কারনে পেটে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
- যাদের ডায়বেটিস আছে তারা মিল্কশেক থেকে দূরে থাকেন।কারন ডায়বেটিস মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
- পরিমিত ব্যয়াম না করলে শরীরে চর্বি বেড়ে যেতে পারে।
- এটি অধিক স্যাচুরেটেড ফ্যাট যুক্ত। তাই একটু খেয়াল রাখবেন।
- পরিমাণে গড়মিল হলে পেট ব্যাথা করতে পারে।
- কোলেস্টেরলের পরিমান বেড়ে যেতে পারে।
- গ্লকোজ এর পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
- নিয়মের বাহিড়ে গেলে ডায়েরিয়া হতে পারে।
- ১২.চিনির পরিমান ঠিক রাখতে হবে।চিনির পরিমান বেশি হলে এটি দাতের অ্যানামেলের ক্ষতি হতে পারে।আর চিনি বেশি খাওয়া মতেও ঠিক না।
মিল্কশেক খাওয়ার নিয়ম
মিল্কশেক নিয়ম মেনে পরিমান মতো খেতে হবে তবে ভালো ফলাফল পাওয়া
যাবে।যেমনঃ
- হালকা গরম দুধে মিল্কশেক পাউডার মিশিয়ে খাবেন।
- মিল্কশেক খেয়ে পরিমিত ব্যায়াম করবেন।
- ব্যায়াম করার ৩০ মিনিট আগে মিল্কশেক খাবেন।
- চিনির পরিমান কম(পরিমান মতো) রাখার চেষ্টা করবেন।
- বাসায় বানিয়ে খেলে সেইটা বেশি স্বাস্থসম্মতখাবার হবে।
- মিল্কশেক বিকালে অথবা রাতে খেতে পারেন।
- মিল্কশেক দিনে একবার খাবেন।
মন্তব্যঃ আমার মতে যেকোনো জিনিসের ভালো খারাপ দুই দিক ই আছে।তাই আমাদের
উচিৎ একটু সচেতন থাকা।যেহেতু খাওয়ার জিনিস একটু সাবধানতা অবলম্বন করা।নিয়ম গুলো
(পরিমান) মেনে চলা।আর সব চাইতে ভালো হয় যদি আপনি বাসায় ততৈরি করে খান।আশা করি আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন।আরও যদি প্রশ্ন থাকে তাহলে
কমেন্ট করুন।ধন্যবাদ।
আপনাদের কিছু প্রশ্নের উত্তর
মিল্কশেকের দাম কত?
মিল্কশেক খাওয়ার আগে এর বাংলাদেশের বাজার মূল্য কত জেনে দেওয়া উচিৎ। কিছু
অসাধু ব্যবসায়ী অল্প দামে খাবার প্রডাক্ট বিক্রি করে যা স্বাস্থের জন্য
ক্ষতিকর। চলুন একটু দাম সম্পর্কে ধারণা নিয়ে আসি।
১.চকলেট মিল্কশেক এর দাম প্রতি ৫০০ মিলি গ্রাম-১১০০ টাকা।
২.ভ্যানিলা মিল্কশেক এর দাম প্রতি ৫০০ মিলি গ্রাম -৯০০ টাকা।
মিল্কশেক খেয়ে কি ওজন কমানো যায়?
হ্যাঁ যায়। মিল্কশেক খেয়ে ওজন কমানো সম্ভব।তবে আপনাকে অবশ্যই কম ক্যালরি যুক্ত
উপকরণ দিয়ে মিল্কশেক খেতে হবে।আপনার ওজন কমাতে মিল্কশেক যাদুর মতো কাজ করবে।ওজন
কমানোর জন্য আপনি ফ্রুটস মিল্কশেক বেছে নিতে পারেন।কারন ফল এর মধ্যে অনেক
ফাইবার থাকে এবং ক্যালরি কম থাকে যা ওজন কমাতে হেল্প করবে।
রক্তের জন্য মিল্কশেক ভালো কি না?
অতিরিক্ত চর্বি রক্তের জন্য ক্ষতিকর। এটি লোহিত রক্ত কনিকার ক্ষতি
করে।রক্ত নালি সরু করে দেয়।
গর্ভবতী মহিলার মিল্কশেক খাওয়া কি উচিৎ?
এ ব্যাপারে আমাদের ডাক্তার এর পরামর্শ নিতে হবে।কারন আমাদের দেহের ভিতরে
অনেকের অনেক সমস্যা থাকে। আর প্রেগন্যান্সির সময় অনেক উপসর্গ দেখা দেয়।তাই
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না।১০০% নিশ্চিত হয়ে খেতে হবে। নতুবা
বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।তাই আমরা সচেতন থাকবো।
ডেইলি ডাইরির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url