পিঠা উৎসব নিয়ে কিছু কথা আজ আপনাদের সাথে এই পোস্টে শেয়ার করব। পিঠা উৎসব আপনাদের কাছে অনেক পরিচিত একটি শব্দ আবার কারো কাছে অপরিচিতও হতে পারে। চলুন পিঠা
উৎসব সম্পর্কে জেনে নিই।
পিঠা উৎসব সাধারণত শীতকালে হয়ে থাকে। আপনাদের আজকে পিঠা উৎসব এবং শীতের পিঠা
সম্পর্কে জানাবো। পিঠা উৎসব সম্পর্কে জানতে পুরো পোস্টটি পড়ুন আশা করি ভাল লাগবে
এবং অনেক কিছু জানতে পারবেন।
পিঠা উৎসব নিয়ে কিছু কথা বলব আজ আপনাদেরকে। পিঠা উৎসব বাঙালির কাছে একটি পুরনো
সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য। বিভিন্ন দেশে যেমন তাদের স্পেশাল কোনো খাবার বা মিষ্টি
বিখ্যাত।তেমনি আমাদের বাংলাদেশে বা বাঙালির কাছে পিঠা খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার।
বাঙালির বাড়িতে আত্মীয় আসবে আর তারা পিঠা বানিয়ে খাওয়াবে না এটা হতেই পারে
না। আর সেটা যদি হয় শীতকাল তাহলে তো কোন কথাই নেই।
মাঘ ও ফাল্গুন এই দুই মাস প্রচুর শীত থাকে। আর এই সময় পালন হয় পিথা উৎসব।
বাঙালি সারা বছরই কোনো না কোনো পিঠা খেয়ে থাকে। কিন্তু শীতকালকে বলা হয় পিঠার
মৌসুম। শীতকালে তৈরি হয় নানা রংবেরঙের পিঠা। পিঠা খাওয়ার জন্য আত্মীয়দের
দাওয়াত করা হয় আবার আত্মীয়র বাসায় যাওয়া হয়। সকাল অথবা সন্ধ্যায় শুরু হয়
পিঠার নানা রকম আয়োজন।
নানীর দাদীরা শুরু করে পিঠা বানানো। যদিও আগের মত আর এত পিঠা তৈরির আলোড়ন দেখা
যায় না।তবুও বলা যায় একেবারে কালের গর্ভে হারিয়ে যায়নি পিঠা তৈরীর ঐতিহ্য।
গ্রামে এগুলো এখনো লক্ষ্য করা যায় তবে শহরের দিকে অনেকটাই কমে গেছে। নানান রকম
রোগ যেমন ডায়াবেটিস,অতিরিক্ত ওজন, হাইপ্রেসার, হার্টের রোগ এসব নানা কারণে
খাওয়া থেকে বিরত থাকে।
আবার শহরের মানুষ পিঠা তৈরি কে একটু ঝামেলাও মনে করে। যার কারনে বাসায় পিঠা তৈরি
করতে চায় না। ভরপুর শীতের মধ্যে যখন পিঠা উৎসব শুরু হয় তখন ফ্যামিলি সহ ঘুরতে
গিয়ে খেয়ে আসে। তবে গ্রামে এমনটা দেখা যায় না এখনো। তারা বাসায় বেশি করে পিঠা
বানিয়ে আনন্দ করে সবাই মিলে খাবে আত্মীয়-স্বজনদের পাঠাবে এমনটাই হয় গ্রামে।
পিঠা উৎসব কি
পিঠা উৎসব কি? অনেকের এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই। আপনাদের কিছুটা ধারণা দেয়ার
চেষ্টা করি। পিঠা উৎসব পালিত হয় শীতকালে। যখন অনেক বেশি শীত পড়ে তখন বিভিন্ন
শহরে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। এখানে অনেক স্টল বসে। সেই স্টল গুলোতে আপনি
আপনার পছন্দের নানা বাহারি পিঠা দেখতে পাবেন। এমনকি এমন পিঠাও আপনার চোখে পড়বে
সেগুলো কখনোই আপনি নামই শুনেন নাই।
আবার কিছু পিঠা এমন আছে যে আপনাদের এলাকাতে এক নাম কিন্তু অন্য এলাকাতে সেই একই
পিঠা অন্য নামে পরিচিত। শহরে এই পিঠা উৎসবগুলোতে নানান এলাকার নানান রকম পিঠা
চোখে পড়বে। সেই উৎসবে গিয়ে আপনি আপনার পছন্দের পিঠা কিনে খেতে পারবেন। এই পিঠা
উৎসব আমাদের গ্রাম বাংলার আদি ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। বেশিরভাগ শহরে পিঠা উৎসব রাতে
দেখা যায়।
শহরে এই পিঠা উৎসব গুলো কিছুদিন ব্যাপী হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট সময় পর শেষ হয়ে
যায়। যারা পিঠা তৈরিতে পারদর্শী তারা স্ট্রল গুলো ভাড়া নেয়। এবং সেই উৎসবে
আপনারা গিয়ে পছন্দমত পিঠা খেতে পারেন। অনেক ব্যস্ততার কারণে যারা বাসায় পিঠার
আয়োজন করতে পারেন না। তাদের কাছে শীতকালে পিঠা খাওয়ার জন্য উপযুক্ত উৎসব।তাই
আপনারা পিঠা উৎসব ইচ্ছামতো উপভোগ করতে পারেন।
পিঠা মানে কি
পিঠা মানে কি যারা এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চান তাদেরকে বলি। পিঠা একটি খাবার যা
নানা রকম উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়। পিঠা আমরা কম বেশি সারা বছর খেয়ে থাকি
কিন্তু পিঠা খাওয়ার প্রবণতা শীতকালে বেশি দেখা যায়। পিঠা তৈরিতে ব্যবহার হয়
চালের গুড়া (আটা), ময়দা , সুজি, দুধ ,নারকেল ,পাটারি গুড়, আখের গুড়, ইত্যাদি।
এগুলো দিয়ে সাধারণত মিষ্টি পিঠা বানানো হয়।
এর মধ্যে অনেক চিনি বা গুড়ের শিরায় ডুবানো হয় আবার অনেক পিঠা এমনিই খাওয়া
হয়। এই নানা রকম উপকরণ দিয়ে আমরা যে ঐতিহ্যপূর্ণ খাবার তৈরি করছি এটার নামই
পিঠা। এটি আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য। অনেক আগে থেকেই এর প্রচলন। এই সুস্বাদু খাবার
বাঙালির মনে তৃপ্তি এনে দেয়। আমরা যারা বাঙালি তাদের পিঠা ছাড়া চলে না পিঠা
খেতে কম বেশি আমরা সবাই পছন্দ করি।
পিঠা উৎসবে কি কি পিঠা বানানো হয়
পিঠা উৎসবে কি কি পিঠা বানানো হয় চলুন আপনাদের সাথে শেয়ার করি। পিঠা উৎসবে নানা
রকম পিঠা দেখা যায়। যা বলে শেষ করা যাবে না। যার এলাকায় যেটা স্পেশাল সে সেই
পিঠাই বানিয়ে নিয়ে আসে। এমনকি নানান নতুন নতুন পিঠা ও চোখে পড়ে। এতো এতো
বাহারি পিঠার মধ্যে সবচাইতে জনপ্রিয় পিঠা বলা হয় ভাপা পিঠা কে। এটি রাস্তার
পাশেও বিক্রি হতে দেখা যায়।
পিঠা উৎসবে নানান পিঠা যেমন চিতই পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, ভাপা পিঠা ,পুলি পিঠা,
রসমালাই পিঠা, রস বড়া পিঠা ,বকুল পিঠা,কাঠি পিঠা,ঝুড়ি পিঠা,নকশী পিঠা ইত্যাদি।
আপনি সব ধরনের পিঠা পিঠা উৎসবে পেয়ে যাবেন। যদি একটি স্ট্রলে না পান তাহলে পাশের
স্ট্রলে অবশ্যই পেয়ে যাবেন। মিষ্টি পিঠাগুলো আপনি চাইলে শিরায় মধ্যে
ডুবিয়ে দিবে।আপনি আপনার পছন্দমত খেতে পারেন।
শীতের পিঠা
শীতের পিঠা তৈরি করা হয় শীতকালে। শীতকাল কে বলা হয় পিঠার মৌসুম ।শীতকালে পিঠা
তৈরির আরেকটি কারণ হলো: শীতকালে পিঠা নষ্ট হয়ে যায় না।কয়েকদিন ভালো থাকে
অতিরিক্ত শীতের কারণে। আর শীতকালের পিঠা তৈরি হয় গুড়, চিনি ,নারকেল ,আটা নানা
উপকরণ দিয়ে। এইসব খাবার শীতকালে না বানিয়ে অন্য সময় বানিয়ে খেলে পেটের সমস্যা
হতে পারে।
যারা হাই প্রেসার এর রোগী বিশেষ করে তাদের আরো বেশি সমস্যা হবে। পিঠা তৈরির উপকরণ
যেমন দুধ, ডিম ,নারকেল এগুলো গরমের মধ্যে খেলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর
গরমের মধ্যে পিঠা তৈরি করলে পিঠা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ
পিঠা তো বার বার গরম করা যায় না। রসে ডোবানোর লোভনীয় শীতকালে পিঠা বাঙালির কাছে
বরাবরই প্রিয়।
রকমারি পিঠা
শীতকালের মিষ্টি পিঠাঃ শীতকালের মিষ্টি পিঠা তৈরি করা হয় আটা ,গুড় ,চিনি
,দুধ ,সুজি এবং নানা রকম উপকরণ দিয়ে। শীতকালের বেশিরভাগ পিঠা রসে ডুবানো হয়।
চিনি বাঘ গুড়ের শিরা তৈরি করা হয়। তারপর পিঠা বানিয়ে সেই শিরার মধ্যে এক রাত
ডুবিয়ে রাখা হয়। এটাকেই শীতকালের মিষ্টি পিঠা বলে ।যেমনঃপুলি পিঠা,চিতই পিঠা,
রসবড়া বকুল পিঠা ইত্যাদি।
রগরম গরম ভাপা পিঠা খুবই জনপ্রিয় বাংলার মানুষের কাছে। ভাপা পিঠার ভেতরে টুকরো
করা গুড় এবং নারকেল কুচি দেওয়া হয়। আপনারা যদি সাদ বৃদ্ধি করতে চান তাহলে
চালের গুড়ার মধ্যে পানির সাথে কিছুটা দুধ দিয়ে মাখাতে পারেন। আগে ভাপা পিঠা
বানানোর পর গরম গরম পাতলা গুড় দিয়ে খেত সবাই। এখন ভাপা পিঠা অনেকেই মিষ্টি
শিরার সাথে ভিজিয়ে খায়।
ভাপা পিঠা শহর এবং গ্রামের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়। শহরের রাস্তাঘাটে পলিতে
গলিতেই শীতের সকাল এবং সন্ধ্যাতে ভাপা পিঠার ভ্যান গাড়ি দেখা যায়। এমনকি
গ্রামের বাজার গুলোতেও এখন ভাপা পিঠার ছোট্ট দোকান বসতে দেখা যায়। গরম গরম ধোয়া
ওঠা ভাপা পিঠা সকলের কাছে অনেক সুস্বাদু খাবার।তাই এর জনপ্রিয়তা গ্রাম থেকে
শহরেও বিস্তার হয়েছে।
শীতকালে ঝালের পিঠাঃ শীতকালে সন্ধ্যার সময় ঝালের পিঠার আসর বসতে দেখা
যায়। এর মধ্যে জনপ্রিয় ঝালের পুলি পিঠা। ঝালের পুলি পিঠার ভেতরে আলু কুচি
দেওয়া হয়। অনেকেও ঝালের পুলি পিঠা মাংস দিয়ে বানিয়ে থাকে। এছাড়াও দেখা যায়
সাত পুঁথি পিঠা। শীতের সকাল বা সন্ধ্যায় এই ঝাল পিঠাগুলো কম যায় না। সকলের কাছে
অনেক প্রিয় পিঠাগুলো।
নকশী পিঠা
নকশী পিঠা মূলত নানা রকম নকশা করা পিঠা। এটি গ্রাম বা শহরের মেয়েরা ঘরে বসে তৈরি
করে থাকে। নকশী পিঠাকে সাধারণত মেয়েলি পিঠা বলা হয়। এই পিঠাটি আসছে বাংলাদেশ
থেকে। এটি বাংলাদেশের প্রথম তৈরি হয়। প্রথমে চালের গুড়া দিয়ে নানা রকম ডিজাইন
করে নকশী পিঠা তৈরি করা হয় তারপর সেটি চিনির শিরাতে ডোবানো হয়।বেশ কিছুদিন এটি
আপনি সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন।
এটি খেতে অনেক মুচমুচে। এই কাজের মাধ্যমে সাধারণত মেয়েদের প্রতিভাব ফুটে ওঠে।
এটাকে লোকশিল্পীও বলতে পারেন। যে যার প্রতিভা দিয়ে মনের মত করে ডিজাইন করে। এটি
বাংলাদেশে এখন খুবই জনপ্রিয় একটি পিঠা। এই পিঠার স্বাদ ও অতুলনীয়। আপনি খুব
সহজেই বাড়িতে তৈরি করে নিতে পারবেন। চাইলে কিনেও খেতে পারবেন।পিঠা উৎসবে এসব
পিঠা প্রচুর দেখা যায়।
বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য
বাংলার সংস্কৃত ও ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এই পিঠা উৎসব। কালের গর্ভে অনেকটাই হারিয়ে
গেছে এই পিঠা বানানোর প্রচলন।তবে একেবারেই নিঃশেষ হয়ে যায়নি তা ধরে রেখেছে অনেক
গ্রাম গঞ্জের মানুষ। তবে যেন একেবারেই হারিয়ে না যায় তার জন্য অনুষ্ঠিত হয়
পিঠা উৎসব। পিঠা বাঙালির আদিকাল থেকে চলে আসছে। পিঠা বানানোর প্রচলন অনেক কাল আগে
থেকেই।
বাসায় মেহমান আসলে পিঠা তৈরি না করলে যেন তাদের আপ্যায়নই হয় না। মেহমানদারী
করার জন্য পিঠা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল একসময়। এই প্রচলন এখনো দেখা যায়
কিছুটা। তবে আগের সময়টা আর দেখা যায় না। শারীরিক কারণে অনেকেই বাদ দিয়েছে পিঠা
খাওয়া। আবার অনেকে ঝামেলাও মনে করে। পিঠা তৈরীর ইতিহাস বাংলার সংস্কৃত ও ঐতিহ্য
রচনা করে।
সারা বছর খাওয়া হয় এমন কিছু পিঠা
সারা বছর খাওয়া হয় এমন কিছু পিঠা আপনাদের সাথে শেয়ার করি। মূলত শীতকাল কে বলা
হয় পিঠার মৌসুম। শীতকালে পিঠা তৈরি করা এবং খাওয়া দুটোই খুব সুবিধাজনক। তবে
আমরা বাঙালি শীতকালের আশায় বসে থাকি না।সারা বছর কোন না কোন পিঠা সারাক্ষণ
আমাদের বাসায় তৈরি হতে থাকে। তার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য পিঠা আপনাদের সাথে
শেয়ার করি।
যেমন:তেল পিঠা,ডিমের পিঠা ,সাতপুঁথি পিঠা ইত্যাদি। এমন নানা পিঠা আমরা সারা বছরই
খেয়ে থাকি। তবে নারকেল ,দুধ,চিনি, গুড় এগুলো মিশিয়ে কোন পিঠা আমরা গরমের সময়
তৈরি করি না।কারণ গরমের সময় খেলে আমাদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি হয়ে যায়। আপনাদের
সাথে শেয়ার করলাম পিঠা উৎসবের কিছু পিঠা এবং সারা বছরে খাওয়া হয় এমন কিছু
পিঠার সাথে।
মন্তব্যঃ পিঠা উৎসব নিয়ে কিছু কথা
পিঠা উৎসব নিয়ে কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি আজকের পোস্টে আশা করি
আপনাদের ভালো লেগেছে। পিঠা আমরা বাঙালি খুবই পছন্দ করি। যারা গ্রামে থাকেন তাদের
বাসায় অবশ্যই প্রতিবছরেই নিজেরাই পিঠা উৎসব পালন করেন। প্রত্যেকের বাড়িতেই পিঠা
উৎসব হয়। আত্মীয়-স্বজন আসে। এটি আমাদের জন্য খুবই আনন্দদায়ক সময়।
তেমনই শহরের মানুষেরাও পিঠা উৎসবে গিয়ে শীতকালীন পিঠা উপভোগ করেন। আমরা সবাই
পিঠা উৎসবের মাধ্যমে আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছি। আশা করছি এটি
কালের গর্ভে নিঃশেষ হয়ে যাবে না। কেমন লাগলো আজকের পোস্ট আপনারা কমেন্টে অবশ্যই
জানাবেন । মনে আর কোন প্রশ্ন থাকলে বলবেন উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।
ডেইলি ডাইরির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url