নরমাল ডেলিভারির জন্য প্রস্তুতি কিভাবে নিবো

নরমাল ডেলিভারির জন্য প্রস্তুতি কিভাবে নিবো?এমন প্রশ্ন আমাদের সবার মনেই আসে।আপনারা অনেকেই জানতে চান নরমাল ডেলিভারির জন্য কি খেতে হবে ?চলুন জেনে নিই নরমাল ডেলিভারি করানোর নিয়ম সমূহ।

নরমাল-ডেলিভারির-জন্য-প্রস্তুতি-কিভাবে-নিবো

একটা সুস্থ বাচ্চা এবং সুস্থ মা আমাদের সবারই কাম্য। আমরা সকলেই আশা করি,নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে যেন একটা সুস্থ বাচ্চা পাই।কিন্তু আমরা কি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি,নাকি নিজের অজান্তেই নিজের ক্ষতি করছি।

পেইজ সূচিপত্রঃনরমাল ডেলিভারির জন্য প্রস্তুতি কিভাবে নিবো 

নরমাল ডেলিভারির জন্য প্রস্তুতি কিভাবে নিবো 

নরমাল ডেলিভারির জন্য প্রস্তুতি কিভাবে নেব এই প্রশ্নের উত্তর খুজে থাকি আমরা সকলেই। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে একদিনে নরমাল ডেলিভারির প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব না।তাই আমাদের শুরু থেকেই ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।সাবধানে চলাফেরা করতে হবে। কিছু নিয়মের মধ্য দিয়ে চলতে হবে। তাহলেই নরমাল ডেলিভারি করানো আমাদের জন্য সম্ভব হবে। 

আমাদের আশেপাশে আমরা অনেক কেই বলতে শুনতে পাই যে, নরমাল ডেলিভারি হলে ভালোই হতো অল্প দিনের সুস্থ হয়ে যাওয়া যেত।কিন্তু আমরা কি নরমাল ডেলিভারির জন্য প্রয়োজনীয় খাবার ব্যায়াম বা প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে থাকি সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।তাহলে আমরা সুস্থভাবে আমাদের আত্মীয়স্বজন বা গর্ভবতীদের জন্য নরমাল ডেলিভারি আশা করতে পারি।

নরমাল ডেলিভারির জন্য ব্যায়াম 

নরমাল ডেলিভারির জন্য ব্যায়াম খুবই প্রয়োজনীয়।গর্ভবতী মহিলাদের ভারসাম্যপূর্ণ ব্যায়ামের গুরুত্ব অপরিসীম।গর্ভবতী মহিলার শরীরে নানা রকম হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে শারীরিক অনেক পরিবর্তন দেখা যায়।আর সেই সব কারণে ব্যায়াম করার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেড়ে যায়।নিয়মিত কিছুটা ব্যায়াম করলে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়।হজম শক্তি বাড়ে এবং শরীরের অনেক পেশি থাকে সেগুলো মজবুত হয়।

পেশিগুলো সচল থাকে। আমরা অনেকেই মনে করি গর্ভবতী মহিলাদের সারাক্ষণ রেস্ট করতে হয়।কিন্তু না কিছুটা হাঁটাচলা এবং ব্যায়াম করার প্রয়োজন রয়েছে।নিজেকে ফিট রাখতে এবং বাচ্চার গ্রোথ ঠিক রাখতে নিয়মিত কিছু ব্যায়ামের প্রয়োজন। যেমন:শ্যালো ব্রিদিং টেস্ট, ব্রিদিং অল্টারনেটিভ।উজাই ব্রিদিং তা হল যোগব্যায়াম যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য প্রয়োজনীয়।

নরমাল ডেলিভারির জন্য কি খেতে হবে 

নরমাল ডেলিভারির জন্য কি খেতে হবে এমন চিন্তা আমরা সবাই করে থাকি।বাচ্চা ও মায়ের সুস্থতার জন্য পরিমিত খাবার খুবই প্রয়োজন।তবে মনে রাখবেন শুধু পেট পুরে ভাত খেলেই তাকে স্বাস্থ্য কর খাবার বলে না। সুষম খাদ্য খেতে হবে এবং যেসব খাবার শরীরের সকল প্রয়োজনীয়তা মিটাতে পারবে এবং ইমিউনিটি বৃদ্ধি করবে সেই ধরনের খাবার আমাদের খেতে হবে।স্বাস্থ্যকর খাবার দুজনের জন্যই জরুরী। 

আরো পড়ুন: বাংলা আর্টিকেল লেখার নিয়ম 

নরমাল ডেলিভারির জন্য মায়েদের স্ট্রং হতে হবে ।এজন্যে গর্ভকালীন অবস্থায় খাবারের ত্রুটি রাখা যাবেনা ।আমিষ জাতীয় খাদ্য যেমন মাছ মাংস দুধ ডিম ডাল এগুলো নিয়মিত খেতে হবে। শাকসবজি খেতে হবে ।শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণ আইরন থাকে যা গর্ভবতী মায়ের জন্য উপকারী। গর্ভবতী মায়ের জন্য টাটকা ফল খুবই প্রয়োজনীয় উপকারী।ভিটামিন সি যুক্ত ফল পরিমাণ মতো খাবেন।

বাচ্চার ওজন কত হলে নরমাল ডেলিভারি হয় 

বাচ্চার ওজন কত হলে নরমাল ডেলিভারি হয় এমন প্রশ্ন যারা করে থাকেন তাদের জন্য বলে রাখি নরমাল হোক বা সিজারে বাচ্চার ওজন সঠিক থাকা  জরুরী। আপনাদের নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে বাচ্চার ওজনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাচ্চার ওজন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে বা বাচ্চা বেশি বড় হয়ে গেলে নরমাল ডেলিভারি করা খুবই কঠিন হয়ে যায় মায়ের জন্য।

নরমাল-ডেলিভারির-জন্য-প্রস্তুতি-কিভাবে-নিবো
 

যদি একটি বাচ্চার ওজন ২.৫ থেকে ৪ কেজি হয় তাহলে সেই বাচ্চার নরমাল ডেলিভারির জন্য উপযুক্ত। মনে রাখবেন বাচ্চার ওজন ২ কেজির নিচে হলে সেই বাচ্চা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। বাচ্চার ওজন ৪ কেজির ওপরে চলে গেলে নরমাল ডেলিভারি মায়ের জন্য অনেক মারাত্মক হয়ে যাবে।কারণ জরায়ুর মুখ সাধারণত ছয় সেন্টিমিটার এর বেশি বাড়ে না। তাই তখন রিক্স না নিয়ে সিজার করানোর উচিৎ।

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার লক্ষণ 

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার লক্ষণ রয়েছে এমন বুঝলে তবে,নরমাল ডেলিভারি করানো উচিত যদি এমন হয় যে নরমাল ডেলিভারি করালে অনেক বেশি রিক্স হয়ে যাচ্ছে বাচ্চা এবং মায়ের জন্য তখন,নরমাল ডেলিভারি না করিয়ে সিজার করানো উচিত।নরমাল ডেলিভারি যদি করানো সম্ভব হয়, তাহলে তিন চার মাস থেকে খেয়াল করবেন মায়ের পেটটা থাকে নিচের দিকে বুকের উপরে উঠে থাকে না। 

নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে খোঁজ রাখবেন বাচ্চার পজিশন ঠিক আছে কিনা সময় মত বাচ্চা ঘুরে যাচ্ছে কিনা। যদি দেখেন বাচ্চার পজিশন ঠিক আছে এবং মা সুস্থ আছে তাহলে নরমাল ডেলিভারি করানো সম্ভব।অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কাজ করবেন। বাচ্চা হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে মায়ের জরায়ুর অবস্থা দেখেই বোঝা যায় যে বাচ্চা নরমালে হবে কিনা। 

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সময় 

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সময় হয়েছে কিনা তা আমরা কিভাবে বুঝব?আপনার আশেপাশে যদি নরমাল ডেলিভারি তে বাচ্চা হওয়ার মত পারদর্শী কেউ না থাকে তাহলে অবশ্যই হাসপাতালে এডমিট হন। ৪০ সপ্তাহ পর একটি বাচ্চার জন্ম হয়। ৯ মাস ১০ দিন এই নির্দিষ্ট সময় পর গর্ভবতী মহিলার যদি পেটে ব্যথা না উঠে তাহলে ব্যথার ইনজেকশন দিয়ে নিতে পারেন।

আরো পড়ুন: মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো 2024

আর যদি নরমালি ব্যথা উঠে তাহলে ইনজেকশন দেওয়ার দরকার নেই। ডেলিভারির সময় পেটে ব্যথা অনুভব হবে।কিছু সময় পর থেমে যাবে আবার ব্যথা শুরু হবে এভাবেই চলতে থাকবে।ব্যথা শুরু হবে আবার থেমে যাবে এই ঘটনাটি অনেক ঘন ঘন ঘটতে থাকবে। এমন সময় জরায়ু দিয়ে অনেক সাদা স্রাব বের হবে বাচ্চার পজিশন যদি ঠিক থাকে তাহলে বাচ্চার মাথা দেখা যাবে সেই মুহূর্তে বুঝে যাবেন নরমাল ডেলিভারি হওয়া সম্ভব। 

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য করণীয় 

নরমাল ডেলিভারি হওয়ার জন্য করণীয় হল আপনাকে প্রথম থেকে খুবই সচেতন থাকতে হবে প্রথম থেকে নিয়ম অনুসারে কাজগুলো করতে হবে। খাওয়া দাওয়া ব্যায়াম মানসিক সাপোর্ট শারীরিক প্রস্তুতি পারিবারিক সাপোর্ট সবকিছুই আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।তাই কিছু নিয়ম মেনে চলবেন। চেকাপের জন্য নিয়মিত হাসপাতালে যাবেন ।

ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন।আপনার কোন সমস্যা থাকলে সেগুলো ডাক্তারকে খুলে বলবেন। কমপক্ষে দুইবার ডাক্তারের শরণাপন্ন হবে । তিন মাস যখন চলবে তখন একবার ডাক্তারের কাছে যাবেন দেখবেন সব কিছু ঠিক আছে কিনা।রক্তের পরিমাণ ঠিক আছে কিনা। তারপর সাত মাসে একবার যাবেন। ডাক্তারের পরামর্শে নিয়মিত ঔষধ খাবেন।অপ্রয়োজনে আল্টা করার দরকার নেই। 

মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে 

মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে।আপনি যদি পরিকল্পনা করে থাকেন আপনার ডেলিভারি নরমালে করাবেন তাহলে অবশ্যই প্রথম থেকে নিয়ম মানার পাশাপাশি মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।ডেলিভারি পেইন সম্পর্কে আপনার কিছুটা ধারণা রাখা প্রয়োজন। আপনাকে মেন্টাল স্ট্রং হতে হবে।ডেলিভারি পেইন সহ্য করার মতো ক্ষমতা আপনার রাখতে হবে ।

নরমাল-ডেলিভারির-জন্য-প্রস্তুতি-কিভাবে-নিবো
 

ডেলিভারির সময় এমন কোন কাজ করবেন না যেন বাচ্চার ক্ষতি হয়।আর হ্যাঁ মনে রাখবেন শুধু গর্ভবতী মহিলার মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকলে হবে না।পাশাপাশি পারিবারিক সাপোর্ট অত্যন্ত প্রয়োজন।শুধু আপনি নিজে নিজের খেয়াল রাখতে চাইলে হবে না।পাশাপাশি আপনার পরিবারের উচিত আপনার খেয়াল রাখা।মানসিকভাবে সাপোর্ট দেওয়া তাহলেই সম্ভব। 

শারীরিকভাবে প্রস্তুত থাকা দরকার 

শারীরিকভাবে প্রস্তুত থাকা দরকার।গর্ভবতী মহিলাদের জন্য একটা কথা খেয়াল রাখবেন মানসিক প্রস্তুতির পাশাপাশি শারীরিকভাবে সুস্থ এবং স্ট্রং থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভকালীন অবস্থায় ওজন অনেক বেশি বেড়ে যায়। তাই খেয়াল রাখবেন যেন আপনার ওজনটা আপনি মেইনটেইন করতে পারেন।অতিরিক্ত ওজন হলে আপনার নিজেরই অনেক বেশি সমস্যা হবে। 

আরো পড়ুন: হাতের লেখা সুন্দর করার উপায়(pdf) ডাউনলোড

আপনি যদি প্রেসার ও ডায়াবেটিকস এর রোগী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই নিয়মিত ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন এবং প্রেসার ডায়াবেটিক্স নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করবেন। যাদের এলার্জির সমস্যা আছে তারা অবশ্যই এলার্জি যুক্ত খাবার এবং জিনিসপত্র থেকে দূরে থাকবেন।এটি আপনার জন্য খুবই মারাত্মক এবং বাচ্চার জন্যও। যেসব জিনিসে আপনাদের এলার্জি আছে সেগুলো বর্জন করুন।

মন্তব্য: নরমাল ডেলিভারির জন্য প্রস্তুতি কিভাবে নিবো 

নরমাল ডেলিভারির জন্য প্রস্তুতি কিভাবে নিবো এমন প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আজকে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি।আশা করি পুরোটা পড়েছেন এবং আপনাদের ভালো লেগেছে। আমার নিজের মতামত যদি আমি প্রকাশ করি তাহলে আমি বলব,আপনারা চেষ্টা করতে পারেন নরমাল ডেলিভারির জন্য প্রথম থেকে। তবে যদি দেখেন যে নরমাল ডেলিভারি করা সম্ভব হচ্ছে না তাহলে অবশ্যই সিজার করাবেন। 

নরমাল ডেলিভারি অনেক ভালো তবে এটার আশায় নিজের এবং বাচ্চার ক্ষতি করবেন না। ডেলিভারির বিষয় একটু সচেতন হন ডেলিভারির বিষয়ে অনেকের অনেক অবহেলার কারণে অনেক বাচ্চা মা হারা হয় অনেক মা সন্তান হারা হয়।তাই সঠিক সময় সঠিক পদক্ষেপটি নিন। বাচ্চা মাকে সুস্থ রাখুন। এই বিষয়ে যদি আপনাদের আর কিছু জানার থাকে তাহলে কমেন্ট করে জানান।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডেইলি ডাইরির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url